বিপাকে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের শিল্পীরা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দুই দলে বিভক্ত হয়েছেন শিল্পীরা। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে একদল শিল্পী ছিলেন রাজপথে। অন্য দল ছিলেন বিপক্ষে। তারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দলীয় (আওয়ামী লীগ) ট্যাগে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে কথা বলেছেন। অবস্থান নিয়েছিলেন বিগত সরকারের (শেখ হাসিনা) পক্ষে। শুধু তাই নয়, খুলেছিলেন ‘আলো আসবেই’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও। যেখানে তারা আলোচনা করত কোথায়, কী করবে?
গেল ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিপাকে পড়েছেন আওয়ামীপন্থী শিল্পীরা। তার ওপর আবার ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের স্ক্রিনশট ফাঁস যেন- ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব শিল্পীদের। স্ক্রিনশট ফাঁসের মধ্যদিয়ে তাদের কথোপকথন যেমন প্রকাশ্যে এসেছে, তেমন প্রকাশ্যে শিল্পীদের ফোন নম্বরও। যার কারণে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের একাধিক শিল্পীর ফোন নম্বর গেল ক’দিন ধরেই বন্ধ দেখাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্ক্রিনশট ফাঁসের পর আওয়ামীপন্থী শিল্পীরা অনেকেই গাঢাকা দিয়েছেন। নিজ বাড়িতে থাকলেও ঘর থেকে বের হচ্ছেন না তারা। অনেকেই আবার বদলে ফেলেছেন ফোন নম্বর। খুব একটা সক্রিয় নেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও।
আরও পড়ুন:
স্ত্রীর কবরের পাশে পরীর নানা সমাহিত
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিল্পী বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে সবাই কোনো না কোনো দলকে সমর্থন করতে পারে- এটা স্বাভাবিক। আমি একটি দলকে সমর্থন করেছি। তবে সকল অন্যায়-অত্যাচার ও গুম-খুনের বিপক্ষে ছিলাম। হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত থাকলেও অনেকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু তা সেখানে (গ্রুপে) প্রকাশ করার মতো সাহস ছিল না আমাদের। এটি ছিল আমাদের ব্যর্থতা, ভুল। যখন গ্রুপের স্ক্রিনশটগুলো প্রকাশ্যে আসল, তখন অনেকের মনেই আমাদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। যা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রুপে ফাঁস হওয়ার স্ক্রিনশটে শিল্পীদের ফোন নম্বর ছিল। যার কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পরতে হয়েছে। প্রথম দিকে অনেক অচেনা নম্বর থেকে ফোন এসেছে। আজেবাজে কথা শুনতে হয়েছে। এমনকি হুমকিও দেওয়া হয়েছে। বাধ্য হয়েই ফোন নম্বরটি বন্ধ রেখেছি। ফেসবুকে কোনো পোস্ট করলে সেখানেও দেখা যায় আক্রমণাত্মক কথাবার্তা। তাই এখন ফেসবুকেও বলার সাহস হয় না। জানি না, ভক্ত-দর্শকদের মন জয় করতে পারব কিনা।’
আরও পড়ুন:
গণভবনে ডাক পেলেন আ. লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
এদিকে, গ্রুপে থাকা কয়েকজন শিল্পী ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন। জানিয়েছেন নিজের অবস্থান সম্পর্কে। কেউ কেউ আবার ভক্ত- শুভাকাঙ্ক্ষীদের কালে ক্ষমাও চেয়েছেন। সবশেষ গতকাল শনিবার ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের চারজন অ্যাডমিনের মধ্যে থাকা অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন। তিনি ভুল করেছেন, সেই উপলব্ধি আগেই হয়েছিল বলেও জানান। তবে এতদিন তা প্রকাশ বা বলার সুযোগ ও সাহস পাননি এই অভিনেত্রী।
উল্লেখ্য, ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও অভিনেতা ফেরদৌস, নায়ক রিয়াজ, অভিনেতা সাজু খাদেম ও অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি। আর এতে যুক্ত ছিলেন শোবিজে অনেক তারকা। এই তালিকায় আছেন- সংসদ সদস্য ও অভিনেতা ফেরদৌস, নায়ক রিয়াজ, জায়েদ খান, সাইমন সাদিক, অভিনেত্রী অভিনেত্রী সুজাতা, অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ, শমী কায়সার, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, সুইটি, হৃদি হক, আশনা হাবিব ভাবনা, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরুসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:
জোটের ভাগে অনেক নেতা নৌকা হারাবেন