বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসতর্কতা
বন্যায় দেশের অনেকগুলো এলাকা সম্প্রতি ডুবে গিয়েছিল। আবহাওয়াবিদরা বলছেন এই সেপ্টেম্বরে আবার বন্যা হওয়ার কথাও। আগের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব-নিকাশ এবং তা মোকাবিলা করতে না করতেই এমন একটি বার্তা জনমনে কিছুটা হলেও শঙ্কা তৈরি করবে। কিন্তু বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বারবার আসবে এবং তা আমাদের নানা উপায়ে মোকাবিলা করার শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে হবে। হতে হবে সাবধান। কারণ বন্যার সময় মানুষ নানা ধরনের রোগ-জীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এসব রোগ থেকে দূরে থাকতে আমাদের যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ভেজা বা আধভেজা কাপড় গায়ে রাখা মোটেই ঠিক নয়। বন্যাকালে যেসব রোগ দেখা দিয়ে থাকে সেগুলো হলো-
ডায়রিয়া, কলেরা : বন্যাকবলিত এলাকায় প্রকট হয়ে ওঠে বিশুদ্ধ পানির অভাব। টিউবওয়েল নিমজ্জিত হয়ে যাওয়া ও পানি ফোটাতে না পারার সমস্যার কারণে মূলত এমন হয়ে থাকে। তাছাড়া বন্যার পানিতে মানুষ ও পশুপাখির মলমূত্র, আবর্জনা, এমনকি মৃতদেহের অবশেষও মিশে যায়। সেই কারণে ছড়িয়ে পড়ে নানা জীবাণু। ডায়রিয়া বা কলেরা হলে প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো মুখে খাওয়ার স্যালাইন পান করা। যতবার বমি বা পাতলা পায়খানা হবে, ততবার স্যালাইন খেতে হবে। মুখে স্যালাইন খেতে না পারলে, জ্বর হলে, পায়খানার সঙ্গে রক্তপাত হলে বা তীব্র পানিশূন্যতা দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। ছোট্ট শিশুকে মায়ের দুধ পান চালিয়ে যেতে হবে। অন্যরা স্বাভাবিক খাবার খাবেন।
শ্বাসতন্ত্রের রোগ : এসময় ঠাণ্ডা লাগা বা পানিতে অনেকক্ষণ থাকায় কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগও দেখা দিতে পারে। সাধারণ কাশি বা জ্বরে ওষুধ সেবন করা যায়। হালকা গরম পানি পান বা ভাপ নিলে আরাম পাওয়া যাবে। শ্বাসকষ্ট হলে ইনহেলার বা নেবুলাইজার দরকার হতে পারে। শিশুদের বুকের খাঁচা দেবে যেতে থাকলে বা ঘড় ঘড় শব্দ হলে কিংবা নীল হয়ে গেলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
ত্বকের রোগ : বন্যার নোংরা পানির সংস্পর্শে আসায় ত্বকে ছত্রাক, খোসপাঁচড়াসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আশ্রয়কেন্দ্রে গাদাগাদি করে বাস করায় ত্বকের রোগগুলো খুব দ্রুত ছড়ায়। যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ভেজা বা আধভেজা কাপড় গায়ে রাখা ঠিক নয়। বন্যার্তদের বিতরণে নিয়ে যাওয়া পোশাক অবশ্যই ধোয়া, পরিষ্কার ও শুকনা বা ইস্ত্রি করা হতে হবে। শিশুদের ডায়াপার ও নারীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ছয় ঘণ্টা পরপর বদলানো দরকার এবং যথাযথভাবে প্যাকেট করে ফেলা উচিত। ফেলার মতো জায়গা না পেলে আপাতত মুখবন্ধ ব্যাগে রেখে দেওয়া যায়।
সতর্কতা : এই সময় বানভাসিদের উচিত, পচনশীল খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে শুকনা খাবার সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা। এসব খাবার খেলে রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। যত কষ্টই হোক, পানি বিশুদ্ধ না করে পান করবেন না। তৈজসপত্র ধোয়ার কাজেও বন্যার নোংরা পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। বন্যার পানি ত্বকে লাগলে পরে ভালো করে সেই জায়গা ধুয়ে ফেলুন ও শুকনা করে নিন। যারা ত্রাণ নিয়ে যাবেন, তাঁরাও এসব বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
লেখক : মেডিসিন বিশেষজ্ঞ