মাথাব্যথা হলেই ভয় পাবেন না
মাথাব্যথা হয়নি- এমন লোক খুব কমই আছে। কারও মাথাটা একটু ধরে, কারও তীব্র মাথাব্যথা করে। মাথাব্যথার অনেক কারণ আছে। আমরা মনে করি, মাথাব্যথা হলেই বুঝি মস্তিষ্কে মারাত্মক কিছু হয়েছে। মনে করি, মস্তিষ্কে টিউমার হলো কিনা। আসলে তা নয়। বেশিরভাগ মাথাব্যথার কারণ এত মারাত্মক নয়।
প্রকারভেদ অনুযায়ী মাথাব্যথাকে আমরা প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি দুভাগে ভাগ করি। প্রাইমারি মানে কোনো কারণ জানা যায় না। এটির ভাগই বেশি। এ ধরনের মাথাব্যথার মধ্যে আছে টেনশন টাইপ মাথাব্যথা, মাইগ্রেনসহ আরও প্রকার। আবার আমরা মনে করি, মাথাব্যথা মানেই বুঝি মাইগ্রেন। তাও নয়। মাথাব্যথার ৮৫ শতাংশ কারণই টেনশন টাইপ মাথাব্যথা। খুব অল্প পরিমাণ মাথাব্যথার কারণ থাকে মস্তিষ্কের টিউমার, সাইনুসাইটিস, দাঁতের সমস্যা, মেনিনজাইটিস, স্ট্রোক ইত্যাদি। কাজেই মাথাব্যথা মানেই টিউমার নয়, মাইগ্রেন নয়।
টেনশন টাইপ মাথাব্যথা হলে বোঝার কিছু উপায় আছে। যেমনÑ মাথাব্যথা খুব তীব্র হয় না, মাথার দুইপাশে ব্যথা করে। অবশ্য মাথাব্যথার চেয়ে মাথাধরার সমস্যা বেশি হয়। এমন মাথাব্যথায় বমি সাধারণত হয় না।
মাইগ্রেন হলে মাথার একপাশে তীব্র মাথাব্যথা হয়। মাথাব্যথা সাধারণত ৪ ঘণ্টার বেশি হয়। ব্যথার সঙ্গে বমি, বমি বমি ভাব থাকে। মাথাব্যথা শুরু হলে শব্দ শুনলে, আলো দেখলে খারাপ লাগা বেশি হয়। অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুমালে ব্যথা কমে আসে।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
খারাপ ধরনের মাথাব্যথা হলে ব্যথা সাধারণত দিনের বেশিরভাগ সময় থাকে। তবে সকালে ঘুম থেকে উঠলে, হাঁচি-কাশি, মলত্যাগ বা সামনে ঝুঁকলে বেশি হতে পারে। এর সঙ্গে নিউরোলজিক্যাল সমস্যা যেমনÑ এক হাত-পা অবশ, কথায় জড়তা, অস্বাভাবিক আচরণ, চোখে দেখার সমস্যা বা একটি জিনিস দুটি দেখা, খিঁচুনি হতে পারে। এছাড়া তীব্র মাথাব্যথাÑ যা আগে কখনই হয়নি। এমনটা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে মস্তিষ্কের পরীক্ষা করতে হবে।
মাথাব্যথা হলে মোটেই ভয় পাবেন না। একজন নিউরোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন আপনার মাথাব্যথা কোন ধরনের। এর পর তিনি আপনার মাথাব্যথার ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন। খারাপ ধরনের মাথাব্যথা হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। আর যদি প্রাইমারি মাথাব্যথা হয়, তা হলেও তিনি ওষুধ প্রেসক্রাইব করবেন। একটি কথা মনে রাখবেন মাথাব্যথা হলে ওষুধ অনেক দিন খেতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে তা ৬-২৪ মাস। অনেকে কিছুদিন পর একটু ভালো লাগা শুরু হলে ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেন। এতে কিছুদিন পর আবার মাথাব্যথা দেখা দেয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করুন।
লেখক : স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সহকারী অধ্যাপক
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স (নিনস)