মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসায় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ
মাঙ্কিপক্স মোটেই চিকেন পক্স নয়। দুটোই আলাদা সংক্রামক রোগ। মাঙ্কিপক্স বিশেষ ধরনের বসন্ত রোগ। প্রাণিদেহ, বিশেষ করে ইঁদুরের মাধ্যমে এটি দ্রুত ছড়াতে পারে। এ পক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। শ্বাসনালি, শরীরে তৈরি হওয়া কোনো ক্ষত, নাক বা চোখের মাধ্যমে অন্যের শরীরের প্রবেশ করে ভাইরাসটি। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কারণেও হতে পারে।
রোগ নির্নয় : রক্ত ও লালারসের নমুনা পরীক্ষায় শরীরে মাঙ্কিপক্সের ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব।
যেভাবে বুঝবেন আক্রান্ত : অনেকেই শুরুতে সাধারণ জ্বর ভেবে ভুল করেন। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, পেশিতে ব্যথা, গায়ে হাত পায়ে ব্যথার মতো প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দেয়। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন লসিকাগ্রন্থি ফুলে ওঠে। শরীরে অসংখ্যা ছোট ছোট ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়। ক্রমে ক্ষতগুলো আরও গভীর হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। গুটি বা জলবসন্তের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ একই রকম হওয়ায় অনেকে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি বসন্ত বা চিকেন পক্স ভেবে ভুল করেন। গলা ও মাথার পেছন, কুচকি ও বগলে এ লসিকাগ্রন্থি থাকে। এ গ্রন্থি রোগ প্রতিরোধের কোষ জমা রাখে। ভাইরাসে আক্রান্ত হলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে গ্রন্থিগুলো ফুলতে শুরু করে।
দুটি পক্সের পার্থক্য : কারও চিকেন পক্স হলে শরীরে লালচে রঙের ঘামাচি বা র্যাশের মতো গুঁটি বের হয়। শরীরব্যথা, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর ইত্যাদি লক্ষণে চিকেন পক্সের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের মিল আছে। চিকেন পক্সের ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার ৫-৭ দিনের মধ্যে শরীরে ফুসকুড়ির সৃষ্টি করে। সেটি ক্রমে পানিভরা ফোস্কার আকার নেয়। পরে ফোস্কার ভেতরের রস ঘন হয়ে পুঁজের মতো হয়। ৭ থেকে ১০ দিন পর আস্তে আস্তে তা শুকাতে থাকে। মাঙ্কিপক্সে ৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে আক্রান্তর লক্ষণ প্রকাশ হয়। জ্বরের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে শরীরের ফুসকুড়ি দেখা দেয়। ফুসকুড়িগুলো মুখে শুরু হয়। তার পর শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলে সুস্থ হতে ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে। আক্রান্তরা অনেক বেশ দুর্বল হয়ে যায়। তরলযুক্ত ফুসকুড়িগুলো পরে ত্বকের দাগের সৃষ্টি করে। চিকেন পক্স ও মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো- মাঙ্কিপক্সে লিম্ফ নোডগুলো ফুলে যায় (লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি)। আর চিকেনপক্সে এ লক্ষণ থাকে না। লিম্ফনোড হলো ডিম্বাশয় বা কিডনি আকৃতির অঙ্গ। লিম্ফনোডগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃতভাবে উপস্থিত থাকে। মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস শরীরে ঢুকলে লিম্ফনোডগুলো ফুলে ওঠে।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
চিকিৎসা : চিকেন পক্সের যেভাবে টিকা ও প্রতিশোধক আবিস্কৃত হয়েছে, মাঙ্কি পঙ্কে এখন পর্যন্ত সেরকম সরাসরি কোনো ওষুধ নেই। যেসব অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আছে, তা ব্যবহারে মাঙ্কিপক্সের প্রকোপ কিছুটা দূর হয়। এসব ওষুধে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। এ ক্ষেত্রে রোগীর ওপর দুটি ভিন্ন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্রিনসিডোফোভির ও টেকোভিরিমাট দেওয়া হয়। তবে গবেষকদের দাবি, টেকোভিরিমাটে সম্পূর্ণ কার্যকর ফল পাওয়া গেলেও ব্রিনসিডোফোভির কার্যকারিতা এখনো সেভাবে সফল হয়েছে- বলা যাবে না।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ত্বক-চর্ম-যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
চেম্বার : ডা. জাহেদ’স হেয়ার অ্যান্ড স্কিনিক সেন্টার
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
সাবামুন টাওয়ার, পান্থপথ মোড়, ঢাকা
০১৫৬৭৮৪৫৪১৯, ০১৭৩০৭১৬০৬০