নিরপেক্ষ সরকারেই সমাধান দেখছে বিএনপিসহ বিরোধীরা

নজরুল ইসলাম
০৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
নিরপেক্ষ সরকারেই সমাধান দেখছে বিএনপিসহ বিরোধীরা

চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ছাত্র-জনতা, পুলিশ, রাজনৈতিককর্মী হতাহত এবং রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের ব্যাপক ক্ষতিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে বিরোধী নেতাকর্মী ও ছাত্র-জনতা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছে বলে জানান দলগুলোর নেতারা। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত সরকারকে পদত্যাগ করে অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার বিকল্প দেখছেন না তারা।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, চলমান পরিস্থিতি সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছেÑ সরকারের পদত্যাগ। এ বিষয়ে সরকার যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে, তত দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

প্রায় একই মত ব্যক্ত করে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আমাদের সময়কে বলেন, কোনো সরকার তো রাস্তায় গিয়ে পদত্যাগ করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেন। রাষ্ট্রপতি দেশের সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, বলপ্রয়োগ অথবা জরুরি অবস্থা জারি করে চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কারণ ইতোমধ্যে ছাত্র-জনতা কারফিউ ভেঙে রাজপথে নেমে প্রাণ দিয়েছে। যে তরুণ-যুবকরা জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত, সেই তরুণদের দাবি আদায় করা ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, দেশে আজ গণঅভ্যুত্থানের সূচিত হয়েছে। সরকারের নিপীড়নের প্রতিবাদে ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী, চাকরিজীবী, মা-বোন, পিতামাতা, শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, লেখক এককাতারে শামিল হয়েছেন। দলমত, বয়স, ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষ ফুঁসে উঠেছে। দ্রোহের মিছিলে শরিক হচ্ছেন সকল স্তরের সকল শ্রেণির সকল বয়সের মানুষ। এর সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও অবসরপ্রাপ্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও যোগ দিয়েছেন। এটি নজিরবিহীন ঘটনা।

গণতন্ত্র মঞ্চের এক নেতা বলেন, ক্ষমতাসীনরা যেভাবে দেশের মানুষকে হত্যা করছে, তাতে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ নামক দলটির অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।

বিএনপিপন্থি একজন বুদ্ধিজীবী বলেন, পুরো জুলাই মাস এবং ৪ আগস্ট পর্যন্ত যত মানুষ এই আন্দোলনে নিহত হয়েছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো তা কল্পনাও করা যায়নি। ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ওই নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। জবাবদিহিতা না থাকায় সরকার এভাবে নির্যাতনের পথ বেছে নিয়ে হত্যার মতো বড় অপরাধ করছে।

১২-দলীয় জোটের অন্যতম নেতা এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টির মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম আমাদের সময়কে বলেন, সরকার যে পথে হাঁটছে, সেটি রাজনীতির পথ নয়, গণতন্ত্রের পথ নয়। এই পথ সর্বনাশা পথ। দেশ ও জনগণকে নিরাপদ রাখতে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।