রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে জাবিতে মৌন মিছিল
রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষকরা। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় দেশব্যাপী গুম, খুন, আটক ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরে’র ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ মিছিলে শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন তারা। পরে পুনরায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।
সমাবেশে জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৃধা মো. শিবলী নোমানের সঞ্চালনায় বক্তারা দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের হত্যা, তাদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও আটকের ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে ‘মিথ্যা মামলায়’ রিমান্ড মঞ্জুর করার ঘটনার নিন্দা জানান তারা।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘দুঃশাসন ও স্বৈরাচারী মানসিকতার দুঃশাসক যখন রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় থাকে, তার পরিপূর্ণ নকশা ও বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা যখন তাদের যোক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে, তখন তাদের প্রতিরোধ করতে রাষ্ট্রের বাহিনী, নানান যন্ত্র ও তাদের মদদপুষ্ট সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। এখন আবার সরকার শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে আটক করছে, জেলে নিয়ে নির্যাতন করছে। ৭১’র কালো রাতের যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল, তা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।’
ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার বলেন, ‘আজ বলতেই হচ্ছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন দেখিনি, ৬৯’র আন্দোলন দেখার মতো অবস্থা ছিল না। ৭১’র যৎসামান্য বুঝেছি। আজকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় স্লোগান দেখে প্রশ্ন জেগেছে তাহলে কি ৯০’র গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে গেছে। আজকে যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছেন এগুলোর সমাধান করে নিজেদের দায় স্বীকার করে শিক্ষার্থীর দাবি মেনে নিয়ে নিজেরাও বাঁচুন, আমাদেরকে বাঁচান।’
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘ছয় সমন্বয়কারীয়ের ধরে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জোর করে জিম্মি করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বক্তব্য আদায় করা হয়েছে। ডিবি কার্যালয়ে থেকে কোনো কথা বললে ছাত্রসমাজ গ্রহণ করবে না। আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, যে রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত আন্দোলন চলাকালে নিহতদের সংখ্যা স্পষ্ট করে বলতে পারছে না এবং যে হত্যার জন্য রাষ্ট্র সরাসরি জড়িত সেই রাষ্ট্রের শোক ছাত্রসমাজ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। একইসঙ্গে সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহামম্দ খান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসউদ ইমরান ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দসহ আরও অনেকে।