মশাবাহিত রোগগুলো থেকে যেভাবে দূরে থাকবেন

প্রফেসর ডা.এ কে এম মূসা
২৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
মশাবাহিত রোগগুলো থেকে যেভাবে দূরে থাকবেন

বিশ্বের ৫০০ মিলিয়ন সংক্রমণ ও ১ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কারণ মশা। অথচ মশা একটি সাধারণ কীটপতঙ্গ। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুজ্বর, হলুদ জ্বর, চিকুনগুনিয়া ও অন্যান্য রোগ মশার কামড়ে হয়। মশার কামড়ে যে রোগগুলো হয় তা হলোÑ

ম্যালেরিয়া : ম্যালেরিয়া প্লাজমোডিয়াম পরজীবীর মাধ্যমে সৃষ্ট তীব্র জ্বরের অসুস্থতা। এ পরজীবী সংক্রমিত নারী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়, যা রাত ৯ টা থেকে ভোর ৫ টার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে।

প্রাথমিক লক্ষণ : জ্বর, মাথাব্যথা, ঠাণ্ডা লাগার মধ্য দিয়ে রোগটি প্রকাশ পায়। ১০-১৫ দিন পর জ্বরের সংক্রমণ বোঝা যায়। ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা না করা হয়, তা হলে এটি চব্বিশ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হতে পারে। শিশু, অল্পবয়সী শিশু, গর্ভবতী, এইচআইভি বা এইডস রোগী, একইসঙ্গে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা উচ্চ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া অভিবাসী শ্রমিক, ভ্রাম্যমাণ সম্প্রদায় ও ভ্রমণকারীরা, ম্যালেরিয়া হওয়ার ঝুঁঁকি বেশি।

ডেঙ্গু : ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে সংক্রমিত হয়। ছড়ায় স্ত্রী মশার মাধ্যমে। ডেঙ্গুজ্বরের তিনটি ধরনÑ ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট। ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। পেটব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অন্তঃসত্ত্বা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ভালো। ‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গুজ্বর সবচেয়ে খারাপ। এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।

চিকুনগুনিয়া : রোগটি চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায়। রোগের লক্ষণ সংক্রমণের প্রায় এক সপ্তাহ পর দেখা দেয়। হঠাৎ জ্বর দেখা দেয়। জয়েন্ট ফোলে। ব্যথা থাকে। ব্যথা কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। আবার দীর্ঘও হতে পারে। রোগটি ডেঙ্গু সংক্রমণের চেয়েও খারাপ। এতে পেশিব্যথা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং কিছু ক্ষেত্রে ফুসকুড়ি হতে পারে।

চিকিৎসা : মশার মাধ্যমে ছড়ানো বেশিরভাগ রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ম্যালেরিয়া ওষুধের মাধ্যমে সহজেই নিরাময়যোগ্য। কিন্তু ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ওষুধ নেই। কারণ এগুলো ভাইরাল রোগ। জটিলতা দেখা দিলে সহায়ক থেরাপি এবং অঙ্গ-নির্দিষ্ট থেরাপির প্রয়োজন। শরীর ব্যথা, জ্বর, ফুসকুড়ি ও অন্যান্য উপসর্গের চিকিৎসায় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। পরিস্থিতিতি খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিকার : কয়েল, অ্যারোসল, লিকুইড ভ্যাপোরাইজার ছাড়াও বাজারে মশা তাড়ানোর যেসব বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে, তা ব্যবহার করতে পারেন। মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত রাখতে হবে। সন্ধ্যা ও ভোরে মশা বেশি কামড়ায়। এ সময়ে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। মশার কামড় এড়াতে হাত-পা ঢাকা জামা কাপড় পরুন। রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন। মশা তাড়াতে লোশন, রোল-অন ও ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। কয়েলের ধোঁয়া শিশুর জন্য উপযুক্ত নয়। হাঁপানি, অ্যালাজি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই সাবধান থাকুন।

লেখক : অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ

আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড

মিরপুর-১০, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২