কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পূর্ণ অন্য উদ্দেশ্যে হচ্ছে: অ্যাটর্নি জেনারেল
কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পূর্ণ অন্য উদ্দেশ্যে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এই আন্দোলনটা সম্পূর্ণ অন্য কোনো উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি আদেশে বলে দিয়েছেন, তাদের (আন্দোলনকারীদের) বক্তব্য থাকলে আদালতে আসতে পারেন। তারা কিন্তু আসছে না।’
এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমি একটি টকশোতে অনুরোধ করেছি (আন্দোলনকারীদের) কোনো একজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন। তারা বলছে, প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে সরকার এটা (কোটা বাতিল কিংবা সংস্কার) করে দিতে পারে। যারা এটা বলছেন এবং তাদের (আন্দোলকারীদের) যারা বুদ্ধিদাতা, হয় তারা আইন জানেন না, নয় তারা তাদের ভুল পথে পরিচালিত করার জন্য এই কথাগুলো বলছেন। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আদালত আদেশ দিয়ে বাতিল (কোটা বাতিলের পরিপত্র) করে দিয়েছেন, সেখানে সরকার আরেকটা আদেশ দিয়ে কোটা বাতিল করতে পারে না। করলেও সেটা সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে। তাই সুপ্রিম কোর্ট থেকে চূড়ান্ত আদেশ পাওয়ার পর যেটা করার সেটা করতে হবে। তার আগে পারবে না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য যদি কোটা বাতিলই হতো, তাহলে সবচেয়ে বড় জায়গা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট যেটা বলে দেবে সেটা তো কেউ আর পরিবর্তন করতে পারবে না।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। লিভ টু আপিলে হাইকোর্টের রায় বাতিল চাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল করা হয়েছে। এর আগে গতকাল সোমবার হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়েরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
গত রবিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সে রায়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি–নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি–ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ (যদি অন্যান্য থাকে) সব কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে হাইকোর্ট রায়ে বলেন, ‘প্রয়োজনে উল্লিখিত শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এ রায় বিবাদীদের জন্য কোনো বাধা তৈরি করবে না। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটাপূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করায় বিবাদীদের স্বাধীনতা রয়েছে।’
এদিকে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া এই রায় স্থগিত চেয়ে ঢাবির দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগ কোটা নিয়ে আইনি বিরোধের বিষয়বস্তুর ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন। সেই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (সিপি) করেতে বলা হয় এবং পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৭ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়।
এর আগে, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের আন্দোলনের পর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেড (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো। যেখানে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৫ ও প্রতিবন্ধীর ১ শতাংশ কোটা বাতিল করা হয়।
এই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে রিট করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট।
এর প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। পরে গত ৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান চেম্বার কোর্টের অনুমতি নিয়ে একটি সিপি (হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে) আবেদন করেন। ওইদিনই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে সেই আবেদনের শুনানির জন্য ১০ জুলাই দিন ধার্য করেন চেম্বার আদালত।
আরও পড়ুন:
মৌচাকের গোল্ডেন প্লাজায় অগ্নিকাণ্ড