‘ভুয়া পরোয়ানা’য় ৭ দিন কারাবাসের পর মুক্তি পেলেন কৃষক ইলিয়াস
ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের একটি নালিশি মামলায় (সিআর) ‘ভুয়া পরোয়ানায়’ ৭ দিন পর কারামুক্ত হলেন ইলিয়াস হোসেন (২৭) নামের এক কৃষক। তিনি ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ থানার সিংদাহ গ্রামের বাসিন্দা। আজ রবিবার ঢাকা আইনজীবী সমিতির আইনজীবী মো. মাফিুজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আইনজীবী মাফিুজুল ইসলাম জানান, দৈনিক আমাদের সময়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর ঝিনাইদহ জেলার কলিগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেপ্তার ইলিয়াস হোসেনের পরোয়না যাচাই করে পরোয়ানা ভুয়া মর্মে প্রমাণ পান। এরপর তারা ঝিনাইদহ আদালতে ইলিয়াস হোসেনকে কারামুক্তির আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে আদেশ নিয়ে পুলিশ ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আসে। সেখান থেকে গত শুক্রবার ইলিয়াসকে পুলিশ কারামুক্ত করে বাড়ি পৌঁছে দেন।
তবে এ বিষয়ে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।
আরও পড়ুন:
ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল বাবার
এর আগে গত ১০ জুলাই দৈনিক আমাদের সময়ের আনলাইন ভার্সনে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুয়া পরোয়ানায় গ্রেপ্তার হয়ে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে একটি নালিশি মামলার (সিআর) ৭ দিন ধরে কারাগারে আছেন কৃষক ইলিয়াস হোসেন (২৭)। গত ৪ জুলাই থেকে তিনি ঝিনাইদহ কারাগারে আটক আছেন। ওইদিন বাড়ি থেকে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারে পর জানতে পারেন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ৭ নম্বর আদালতের প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির একটি মামলায় পরোয়নায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা গেছে, জীবনে কখনো ঢাকায় না আসা ইলিয়াস কিভাবে ঢাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলো এবং পরোয়ানা হলো তা শুনে তিনি অবাক হয়ে যান। কালিগঞ্জ থানা পুলিশকে সেকথা জানান ইলিয়াস। কিন্তু পুলিশ তার কোনো খোঁজ না নিয়েই ঝিনাইদহ আদালতে চালান করেন। ফলে গত ৪ জুলাই ঝিনাইদহ আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সেখানে ঝিনাইদহ আদালতে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকিদুল ইসলাম আসামি পক্ষে জামিন আবেদন করেন। এরপর মামলার সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য তিনি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের আইনজীবী মো. মাফিজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
আইনজীবী মাফিজুল ইসলাম ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ৭ নম্বর আদালতের পরোয়ানায় গ্রেপ্তার হওয়া পরোয়ানা নিয়ে যোগাযোগ করে দেখতে পান সে আদালত পল্টন নয়, গুলশান আমলি আদালত। সে মামলার আসামির নামের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া আসামির কোনো মিল নেই। ফলে তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ২৭ নম্বর সিআর (পল্টন) আমলি আদালতে খোঁজ নিয়ে দেখতে পান চলতি বছর এ পর্যন্ত পাঁচশতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। ফলে সে আদালতে সিআর মামলা থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। আইনজীবী বুঝতে পারেন গ্রেপ্তার হওয়া ইলিয়াস পূর্ব শত্রুতার জেরে ভুয়া পরোয়ানা তৈরি করে কলিগঞ্জ থানায় পাঠিয়েছেন।
আইনজীবী মফিজুল ইসলাম ভুয়া পরোয়ানার বিষয়টি আইনজীবী আকিদুল ইসলামকে নিশ্চিত করার পর তিনি ঝিনাইদহ আদালত থেকে ইলিয়াস হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর নথি ঢাকার আদালতে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু বুধবার পর্যন্ত তা ঢাকার আদালতে আসেনি।
আরও পড়ুন:
চীনা অ্যাপের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব মানুষ
আইনজীবী মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ভুয়া পরোয়ানা হলেও সে আদালতের পরোয়ানা দেখনো হয়েছে সে আদালতে কারাগারে পাঠানোর কাগজপত্রসহ আবেদন করে কারামুক্তির আদেশ নিলেও ইলিয়াস কারামুক্ত হতে পারবেন। আমরা চেষ্টা করছি ঝিনাইদহ আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো নথি আনার। এরকম ভুয়া পরোয়ানায় অনেক মানুষ গ্রেপ্তার হচ্ছেন। তাই থানায় কোনো পরোয়ানা গেলে থানা কর্তৃপক্ষের উচিত তা আগে যাচাই কারা। তারপর আসামি গ্রেপ্তার করা। তাহলে এভাবে কোনো মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হবে না।’