গরমে যে ধরনের মাথাব্যথা বেশি হয়
মাথাব্যথা নানা ধরনের হয়ে থাকে এবং একেক সময় একেক ধরনের মাথাব্যথা হয়ে থাকে। তবে সব ধরনের মাথাব্যথা যে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে, বিষয়টি এমন নয়। কোনো কোনো মাথাব্যথা খুব সাধারণ, আবার কোনো কোনো মাথাব্যথা খুবই জটিলতা তৈরি করে। গরমকালে এক ধরনের মাথাব্যথা বেশি হয়ে থাকে। এর নাম ক্লাস্টার মাথাব্যথা। এটি একধরনের দীর্ঘমেয়াদি মাথাব্যথা। এ ধরনের মাথাব্যথা পালাক্রমে হয় অর্থাৎ একবার হয়ে যাওয়ার পর রোগী বেশ কিছুদিন ভালো থাকে। এর পর আবার কোনো একদিন হয়।
তবে বর্তমানে প্রচণ্ড গরমের কারণে এমন মাথাব্যথার রোগীর কষ্ট বেড়েছে। এ সমস্যা সাধারণত ছেলেদের বেশি হয়ে থাকে। কারণ তাদের বেশি বাইরে বের হতে হয়। যাদের বয়স ২০ বছর বা এর বেশি, তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের মাথাব্যথার আশঙ্কাও অনেক বেশি থাকে। পরিবারের কারও একজনের থাকলে অন্যদের হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
বিজ্ঞানীরা ক্লাস্টার মাথাব্যথার যথাযথ কারণ আজও বের করতে পারেননি। তবে সেরোটোনিন ও হিস্টামিন নামক দুটি উপাদানের সঙ্গে যে এ সমস্যার সম্পর্ক রয়েছে, তা অনেকটাই আজ প্রমাণিত। ক্লাস্টার মাথাব্যথায় চোখ লাল হয়ে ওঠে, চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ে, নাক সারাক্ষণ বন্ধ থাকে বা নাক দিয়ে পানি ঝরতে থাকে, অস্থির অস্থির লাগে, বমিভাব হয় এবং ক্ষুধামান্দ্য থাকে। এ ধরনের মাথাব্যথা সাধারণত একদিকে হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
ক্লাস্টার মাথাব্যথা শনাক্ত করা খুব একটা কঠিন নয়। তবে এজন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া একান্ত প্রয়োজন। চিকিৎসক যদি রোগীর কাছ থেকে রোগের ইতিহাস ভালোভাবে জেনে নিতে পারেন এবং শারীরিক কিছু পরীক্ষা করাতে সক্ষম হন, তবে অসুখটি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারবেন। পরীক্ষাগুলোর মধ্যে সিটি স্ক্যান ও এমআরআই প্রয়োজন হতে পারে অন্য কোনো অসুখ আছে কিনা, তা জেনে নেওয়ার জন্য।
এ রোগের কিছু ‘ট্রিগার ফ্যাক্টর’ হলো মদ্যপান ও ধূমপান, অতি উজ্জ্বল আলো, উত্তাপ, কিছু ওষুধ, কোকেন, অত্যধিক পরিশ্রম, বেশি গরম বা রোদে বের হওয়া, উঁচু স্থানে আরোহণ। এগুলোর কারণে হঠাৎ এই মাথাব্যথা শুরু হয়।
আরও পড়ুন:
শীতের রোগ-বালাইয়ের ব্যাপারে সচেতন হোন
করণীয় : কিছু ওষুধ ক্লাস্টার মাথাব্যথা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। যেমন- প্রোপানোলল, ভেরাপামিল, সাইপ্রোহেপ্টাডিন, টপিরামেট, ভ্যালপ্রোয়িক অ্যাসিড, লিথিয়াম, এমিট্রিপটাইলিন ইত্যাদি। হঠাৎ ক্লাস্টার মাথাব্যথা শুরু হলে ট্রিপট্যান-জাতীয় ওষুধ বা স্টেরয়েড ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এক বালতি ঠাণ্ডা পানিতে ১০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখলে এবং শতভাগ অক্সিজেন দিলে রোগী দ্রুত আরাম পায়।
ক্লাস্টার মাথাব্যথা জীবনের জন্য হুমকি নয়। এ ধরনের ব্যথায় মস্তিষ্কের কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু এ ধরনের ব্যথা শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দেয়। অভিজ্ঞ নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলে এ থেকে উপশম পাওয়া যায়।
লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল শেরেবাংলা নগর, ঢাকা। চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা। ০১৯২৭০৭৮৭৬৬, ০১৭৯৮৫৬০০৪৪