যেসব কারণ পাকস্থলীতে ক্যানসার হওয়ার জন্য দায়ী

ডা. মো. একরামুল হক জোয়ার্দ্দার
২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
যেসব কারণ পাকস্থলীতে ক্যানসার হওয়ার জন্য দায়ী

পাকস্থলীর ক্যানসার বিশ্বব্যাপী সব ক্যানসারের মধ্যে পঞ্চম। ক্যানসার সংক্রান্ত মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় উন্নত দেশে পাকস্থলীর ক্যানসারের সংক্রমণ বেশি। প্রাণঘাতী ম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলোর মধ্যে এ ক্যানসার একটি। আক্রান্তের পর রোগীর পাঁচ বছর বেঁচে থাকার হার প্রায় ২০ শতাংশ।

আক্রান্তের কারণ : কারণের মধ্যে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ একটি। গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার হওয়ার ক্ষেত্রে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি দ্বারা সাধারণত পাকস্থলীর নিচের দিকে ক্যানসার হয়।

খাদ্যাভ্যাস : লবণযুক্ত খাবার, ধোঁয়াযুক্ত বা খারাপভাবে সংরক্ষিত খাবার, নাইট্রেট, নাইট্রাইট ও সেকেন্ডারি অ্যামাইনযুক্ত খাবার গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

অ্যালকোহল সেবন : তথ্যমতে, দীর্ঘদিন বেশি অ্যালকোহল সেবন পেটের আস্তরণ ইরিটেট করতে পারে। ক্ষতি হতে পারে কোষগুলোর। দীর্ঘস্থায়ী জ্বালা ও প্রদাহ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। ১০টি গবেষণার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, যারা অ্যালকোহল পান করেন, তাদের পেটের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি পান না করা ব্যক্তির তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি।

অতিরিক্ত তামাক ব্যবহার : ধূমপায়ীর পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি অধূমপায়ীর তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি থাকে। ধূমপান ঐ. ঢ়ুষড়ৎর সংক্রমণের চিকিৎসাও কম কার্যকর করে তোলে।

দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রাইটিস (পেটের প্রদাহ) : যাদের পেটের প্রদাহ আছে, তাদের পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

পারিবারিক ইতিহাস ও ক্যানসার সিনড্রোম : যাদের পাকস্থলীর ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস আছে (পিতা-মাতা, ভাইবোন, বা ছেলেমেয়ে), যার পাকস্থলীতে ক্যানসার হয়েছে এবং পারিবারিক ক্যানসার সিন্ড্রোম আছে, তারা আক্রান্ত হতে পারেন।

জিনগত পরিবর্তন : যাদের ঢ়৫৩ (লি-ফ্রোমেনি সিন্ড্রোম) ও ইজঈঅ২ জিনে পরিবর্তন হয়, তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি।

এপস্টাইন-বার ভাইরাস সংক্রমণ : পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া, ক্ষতিকারক রক্তাল্পতা (একটি অটোইমিউন অবস্থা যেখানে অন্ত্র সঠিকভাবে ভিটামিন বি ১২ শোষণ করতে না পারায় লাল রক্তকণিকার সংখ্যা কম হয়), গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (পাকস্থলীর অ্যাসিড যেখানে বারবার খাদ্যনালিতে প্রবাহিত হয়)।

রক্তের গ্রুপ : বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তের গ্রুপ অ ক্ষেত্রে ঐ পাইলোরি সংক্রমণের অনুপাত (ঙজ= ১.৪২; ৯৫% ঈও ১.০৫-১.৯৩) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। অইঙ নন ব্লাড গ্রুপের সঙ্গে তুলনা করে ঙ ব্লাড গ্রুপের ব্যক্তিদের ঐ-এর ঝুঁকি কমে যায়।

পরিবেশ ও পেশাগত এক্সপোজার : ধাতুশ্রমিক, খনিশ্রমিক, রাবারশ্রমিক এবং সেইসঙ্গে কাঠ বা অ্যাসবেস্টস নিয়ে কাজ করা মানুষগুলো বেশি ঝুঁকিতে থাকে। উচ্চমাত্রার বিকিরণের সংস্পর্শে থাকলেও পাকস্থলী ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এসবের এক বা একাধিক কারণ থাকা মানেই আপনি পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন। আসুন, পাকস্থলী ক্যানসার বিষয়ে সচেতন হয়ে এ ক্যানসার প্রতিরোধ করি।

লেখক : জেনারেল, ল্যাপারোস্কপিক ও ক্যানসার সার্জারি বিশেষজ্ঞ সার্জন, এনআইসিআরএইচ

চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি. (শ্যামলী শাখা) মোহাম্মদপুর, ঢাকা। হটলাইন : ০৯৬১৩৭৮৭৮০৬