মেরুদণ্ডে টিউমার হলে বুঝবেন যেভাবে

অধ্যাপক ডা. হারাধন দেব নাথ
০৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
মেরুদণ্ডে টিউমার হলে বুঝবেন যেভাবে

মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি হলো মেরুদণ্ড। এটির ভেতর দিয়ে চলে গিয়েছে স্নায়ুরজ্জু বা স্পাইনাল কর্ড। আমাদের মস্তিষ্ক থেকে প্রান্তিক স্নায়ু পর্যন্ত শরীরের সব ধরনের সংকেত এই স্পাইনাল কর্ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে। নানা কারণে স্পাইনাল কর্ডের ভেতরে ও এর আশপাশে অস্বাভাবিকভাবে টিস্যু বা কোষ বেড়ে যেতে পারে। এমনকি ছোট ছোট পিণ্ডও তৈরি হতে পারে। আকস্মিকভাবে কোষ বেড়ে যাওয়া কিংবা আগে কখনই ছিল নাÑ এমন পিণ্ড তৈরি হওয়াকে বলা হয়ে থাকে স্পাইনাল কর্ডের টিউমার বা মেরুদণ্ডের টিউমার।

মেরুদণ্ডে টিউমারের কারণ : বেশির ভাগ সময় মেরুদণ্ডের টিউমার কেন হয়, তা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মেরুদণ্ডের কর্ডে টিউমারের পেছনে ত্রুটিযুক্ত জিনকে দায়ী করে থাকেন। কিন্তু এসব জিনগত ত্রুটি মানুষ জন্মগত বা উত্তরাধিকার সূত্রে পায়, নাকি সময় ও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বিকশিত হয়ে থাকে, সেই সম্পর্কে নির্দিষ্ট করেও কিছু বলা যায় না।

অনেক সময় ক্ষতিকর পরিবেশে দীর্ঘদিন বসবাস ও নির্দিষ্ট ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে মেরুদণ্ডে টিউমার হতে পারে। এছাড়াও আরও কিছু কারণে এ সমস্যাটি দেখা দিয়ে থাকে।

যেভাবে বুঝবেন : মেরুদণ্ডে টিউমার হলে মানবদেহের কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আসুন, জেনে নিই সেইসব উপসর্গগুলোÑ

মেরুদণ্ডের কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় (টিউমারটি যেখানে রয়েছে) তীব্র ব্যথা হতে পারে। সার্বক্ষণিক পিঠে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। ব্যথা পিঠের ওপরের ও নিচের অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পিঠের ব্যথা দিনকে দিন বাড়তেই থাকে। কোনোভাবেই কমতে চায় না। এ কারণে অনুভূতিহীন, অসাড়তা বোধ করতে পারেন। এই অনুভূতি মোটেই তাপ ও শীতের মতো উপলব্ধি করতে পারবেন না। অন্ত্র ও মূত্রাশয়ের কার্যকারিতা ক্রমে হ্রাস পেতে পারে। চলাফেরা করতে অসুবিধা বোধ করতে পারেন। অনেক সময় রোগী বাহ্যিক কোনো কারণ ছাড়াই পড়েও যেতে পারেন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বেশি অনুভব হতে পারে। পক্ষাঘাত অর্থাৎ হঠাৎ করে পা বা হাত অবশ হয়ে যেতে পারে কিংবা এমন ধরনের অনুভূতি হতে পারে।

অনেক সময় মানবদেহের অন্য কোনো অঙ্গের টিউমার ও ক্যানসার মেরুদণ্ডে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে প্রোস্টেট ও কিডনির ক্যানসার মেরুদণ্ডে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আবার কখনো কখনো টিউমার মেরুরজ্জুর আবরণীতে হতে পারে, পরবর্তীকালে যা ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।

করণীয় : উপসর্গগুলো দেখা দিলে কিংবা সন্দেহ হলে সময় নষ্ট না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক বিস্তারিত শুনে ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করবেন এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা শুরু করবেন।

লেখক : অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

চেম্বার : ল্যাবএইড হসপিটাল লিমিটেড

ধানমন্ডি, ঢাকা। ০১৭১১৩৫৪১২০