থাইরয়েড ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়

অধ্যাপক ডা. মো. ইয়াকুব আলী
০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
থাইরয়েড ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়

থাইরয়েড গ্রন্থি হলো হরমোন গ্রন্থি। এই গ্রন্থির কোনো অংশে কোষসংখ্যা অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে গেলে তাকে বলে থাইরয়েড ক্যানসার। গলার সামনের অংশের নিচের দিকে এটির অবস্থান। এ গ্রন্থি কোনো কারণে বড় হলে তাকে বলা হয় গলগণ্ড। থাইরয়েড গ্রন্থির কোনো অংশে টিউমারের মতো ফুলে উঠলে বলে থাইরয়েড নডিউল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর অংশবিশেষ ফুলে ওঠা ক্যানসার নয়।

ক্যানসারের কারণ : অন্য স্থান থেকে ক্যানসার সেল এসে থাইরয়েড ক্যানসার হতে পারে। জীবনধারার স্বাভাবিক গতিতেও এ ক্যানসার দেখা দিতে পারে। বয়স বাড়লে এ ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ে। যে কোনো বয়সে রোগটি হতে পারে। তবে নারীরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। রেডিয়েশনের কারণেও থাইরয়েড ক্যানসার দেখা দিতে পারে। এছাড়া অদৃশ্য শক্তি, যেমন- রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন টাওয়ারের অস্বাভাবিক মাইক্রোওয়েভ থাইরয়েড ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।

লক্ষণ : গলার সামনের অংশ ফুলে ওঠে। ফোলা অংশ বেশ শক্ত হয়। এক বা একাধিক টিউমার হতে পারে। উভয় পাশে টিউমার হতে পারে। আশপাশের লিম্ফ নোডগুলো ফুলে উঠতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যথা হতে পারে। স্থানটি লাল হতে পারে। এটির ভেতরে রক্তক্ষরণ হতে পারে। ওজন কমে যায়। খেতে অরুচি হয়। কোনো কিছু খেতে বা ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়। কাশি হতে পারে, গলার ভেতর চুলকাতে পারে। স্বর মোটা বা ফ্যাসফেসে হতে পারে। শ্বাসনালির ওপর চাপ সৃষ্টি হয়ে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

চিকিৎসা : থাইরয়েড ক্যানসার সময়মতো চিকিৎসা করালে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আরোগ্য সম্ভব। তবে সময়মতো চিকিৎসা করাতে হবে। গলার সামনে ফুলে উঠলে দ্রুত চিকিৎসককে দেখাবেন। আল্ট্রাসনো করে বোঝা যায়, এটি টিউমার, না কোনো পানি, না রসের থলি। যদি আল্ট্রাসনোয় তা ক্যানসারের মতো মনে হয়, তবে এফএনএসি বা বায়োপ্সি করা উচিত। রিপোর্ট বা অভিজ্ঞতার আলোকে সার্জন মনে করলে থাইরয়েড গ্রন্থি ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। প্রয়োজনীয় অংশ অপারেশন করে ফেলে দেওয়ার পর সেখানে যাতে আর কোনো ক্যানসার সেল না থাকে, সে জন্য রেডিও আয়োডিন থেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হয়। কোনো কোনো রোগীকে আজীবন থাইরয়েড হরমোন সেবন করে যেতে হতে পারে।

প্রতিরোধে করণীয় : থাইরয়েড নডিউল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। ক্যানসার প্রবণতা আছে কিনা, তা শনাক্ত করা। গলা বা তার আশপাশে রেডিয়েশনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা। শিশু-কিশোরদের একান্ত প্রয়োজন ছাড়া রেডিওথেরাপি না দেওয়া। ভেজাল খাবার না খাওয়া। থাইরয়েড ক্যানসারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে পারিবারিক ইতিহাস। তাই পরিবারে বাবা-মায়ের থাইরয়েড ক্যানসার থাকলে পরিকল্পিত পরিবার গঠন করা উচিত।

লেখক : রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট এবং অধ্যাপক ও প্রধান অনকোলজি বিভাগ

এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সাভার, ঢাকা

চেম্বার : আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা

০১৯১৫৭২৮২৬৬; ০১৭৪৫৩৪৯৪১৫