রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের ‘গুমর ফাঁস’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র না হয়েও ভুয়া পরিচয় দিতেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল্লা-হিল-গালিব। আজ মঙ্গলবার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হোসেন বকুল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেই ‘গুমর ফাঁস’ করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল্লা-হিল-গালিব ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভুয়া সনদে’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছেন, যা আংশিক ও অসম্পূর্ণ তথ্য। ওই ব্যক্তি এই বিভাগের ছাত্র নন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তিনি (মো. আসাদুল্লা-হিল-গালিব) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামের জুলাই ২০২১ সেশনের ছাত্র হিসেবে ভর্তির আবেদন করেছিলেন। তবে তার জমা করা অনার্সের সার্টিফিকেটে অসঙ্গতি পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিষয়টি যাচাই করে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামের জরুরি সভায় তার ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই হিসেবে সম্মেলনের ১৪ দিন আগেই আসাদুল্লা-হিল-গালিবের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। কিছু জানা নেই। আমার কাছে বিভাগের প্রত্যয়নপত্র আছে।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ বলেন, ‘প্রথমত ছাত্রত্ব না থাকলে সে কোনোভাবেই দায়িত্বে আসতে পারে না বা থাকতে পারে না। তবে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে আমাদের দপ্তর সেলে কোনো অফিসিয়াল অভিযোগ আসেনি। কোনো অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং বিষয়টি প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সম্মেলনের আগে একটি জাতীয় দৈনিকে গালিবের জাল সনদের বিষয়ে সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পরও তিনি কীভাবে দায়িত্বে পেলেন, জানতে চাইলে মেফতাহুল ইসলাম পান্থ বলেন, ‘আমরাত মিডিয়া দেখে ছাত্রলীগ চালাই না। যে কেউ যে কারও বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে, সেটা আমরা খতিয়ে দেখি।’
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগে আসাদুল্লা-হিল-গালিবের স্নাতকের সনদ জাল উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল একটি জাতীয় দৈনিকে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ পেতে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাসের জাল সনদ সংগ্রহ করে রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছেন গালিব। খবরটি তখন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলেও তার পদ পেতে সেটা কোনো প্রভাব ফেলেনি।
জানা যায়, গালিব রাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দ্বিতীয় বর্ষ পার করতে পারেননি। বিভাগ থেকে একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ড্রপ-আউট হন তিনি।
এ ছাড়া সম্মেলনের আগে গালিবের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকা এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অভিযোগ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন বলেও অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র না হয়েও অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকছেন তিনি।