কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন

প্রবাস ডেস্ক
২৪ মে ২০২৪, ২১:০৯
শেয়ার :
কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন

মিশরের কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কায়রোর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অভিজাত পাঁচ তারকা হোটেল সেমিরআমিস ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ দূতাবাস।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মিসর সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন মিসরের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. ইয়াসমিন সালাহ আল দীন ফুয়াদ। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী এম্বাসেডর আহমেদ শাহীন এবং রাষ্ট্রাচার বিষয়ক সহকারী পরররাষ্ট্র মন্ত্রী এম্বাসেডর নাবিল হাবাশি। 


এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দূতাসের রাষ্ট্রদূতবৃন্দ, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, কূটনীতিক, মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মিসরের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতারা, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সদস্যরা, মিসরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বাংলাদেশি শিক্ষকেরা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি কর্মকর্তারা, মিসরে প্রসিদ্ধ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, বাংলাদেশি কমিউনিটির সম্মানিত সদস্যসহ প্রায় ২৫০ আমন্ত্রিত অথিতি। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে মিসর ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে তার বক্তব্য দেন। বক্তব্যের শুরুতে রাষ্ট্রদূত সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।  

রাষ্ট্রদূত শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতাসহ, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের যাদের চরম আত্নত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। রাষ্ট্রদূত আমাদের স্বাধীনতা লাভে অবদান রাখার জন্য কূটনৈতিক কোরের সম্মানিত সদস্যদের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ তার বক্তব্যে মিসর এবং বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি অন্যতম প্রথম আরব দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি এবং পরবর্তীকালে ওআইসি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তিতে মিসরের ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বাংলাদেশ এবং মিসরের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং এই সম্পর্ক জোরদারের জন্য একযোগে কাজ করার বাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি, পর্যটন সহযোগিতা জোরদারকরণ, মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি বাস্তবায়ন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়েন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।  

রাষ্ট্রদূত ১৫তম ওআইসি সম্মেলনের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের ব্যাপারে আলোকপাত করেন এবং বৈঠকে আলোচিত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে কাজ করার আহ্বান জানান।  

বক্তব্যের রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, আমাদের জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ার। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃত। আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিচু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার।  

রাষ্ট্রদূত দেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিরামিক ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ব্যাপারে আলোচনা করেন। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মিসরের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. ইয়াসমিন সালাহ আল দীন ফুয়াদ মিসরের প্রধানমন্ত্রী ড. মোস্তফা মাধবৌলির পক্ষে বক্তব্য দেন। মন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের এই আয়োজনে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশের সাথে মিসরের দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে তিনি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দুই দেশের চ্যালেঞ্জসমূহের কথা তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে তিনি পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন।  

প্রধান অথিতির বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রদূত প্রধান, অথিতি, বিশেষ অথিতি এবং অন্যান্য রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে একটি গ্রুপ ফটো তোলা এবং কেক কাটা হয়। 

অনুষ্ঠানের নেপথ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং পর্যটনের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে আগত অতিথিরা ব্যুফে ডিনারে অংশ নেন। 

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে গত ২৬ মার্চ দূতাবাস প্রাঙ্গণে বাংলাদেশি কমিউনিটির সম্মানিত সদস্যদের উপস্থিতিতে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সহিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৪ উদযাপন করা হয়।