‘টাকা না নেওয়ায়’ পোলিং অফিসারকে মারধর

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
২০ মে ২০২৪, ১৬:২৪
শেয়ার :
‘টাকা না নেওয়ায়’ পোলিং অফিসারকে মারধর

শরীয়তপুরের জাজিরায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা না নেওয়ায় পোলিং অফিসারকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গতকাল রবিবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার বিকে নগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল মঙ্গলবার জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। নির্বাচনে ২৫ নম্বর বিকে নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর আবু সাইদ পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি নির্বাচনী প্রশিক্ষণ নিয়ে গতকাল রবিবার রাতে মীর আবু সাইদ বাড়ির পাশে বিকে নগর বাজারে যান। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে এক যুবক মীর আবু সাইদকে বাজারের এক পাশে ডেকে বিকে নগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার, আব্দুল আলী সরদার ও মজিবুর বানিয়ার কাছে নিয়ে যান। এ সময় সাইদুর রহমান সরদারসহ অন্যরা মীর ইমরান আলীকে নির্বাচনের দিন মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির পক্ষে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন। বিনিময়ে তাকে মোটা অঙ্কের টাকাসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখান।

কিন্তু মীর আবু সাইদ সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। এরপর সাইদুর রহমান সরদার, আব্দুল আলী সরদারসহ অন্যরা মীর আবু সাইদকে মারধর করেন। খবর পেয়ে তার স্বজন ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বর্তমানে তিনি বাড়িতে অবস্থান করছেন।

পোলিং অফিসার ও শিক্ষক মীর আবু সাইদ বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে। ব্যক্তিগত কাজে বাজারে গেলে একজন লোক আমাকে ডেকে নিয়ে যায় সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানসহ অন্যদের কাছে। তারা আমাকে টাকার বিনিময়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করার জন্য প্রস্তাব দিলে আমি অস্বীকৃতি জানাই। এরপর তারা আমাকে মারধর করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছি। আমি আমার সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ দেব।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক ও বিকে নগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার বলেন, ‘আপনি কোথা থেকে বিষয়টি জেনেছেন, তা আমি বুঝতে পারছি না। মীর আবু সাইদ এমন কোনো বংশের ছেলে নয় যে, তাকে ম্যানেজ করতে পারলে ১০০ ভোট পাওয়া যাবে। হতে পারে সে সরকারি চাকরিজীবী ও পোলিং অফিসার। তার সঙ্গে আমাদের কারও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আফরোজা আক্তার সুমি বলেন, ‘আমরা সরকারি চাকরি করি। সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালন করাই আমাদের কাজ। নির্বাচন একটি রাজনৈতিক ইস্যু। কারও পক্ষ নিয়ে কাউকে রাজনৈতিকভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক। আমাদের শিক্ষক মীর আবু সাইদ এমন একটি প্রস্তাবে সম্মতি না দেওয়ায় তাকে মারধর করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অন্যায়। বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দেব। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই আমি।’

এ বিষয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। যদি লিখিত অভিযোগ পাই, তাহলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং, পোলিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ গত বৃহস্পতিবার জাজিরা সরকারি মোহর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে সম্পন্ন হয়েছে। ওই প্রশিক্ষণে মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির ছোট ভাই ডা. ইমন ফরাজি উপস্থিত হয়ে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের মোবাইল নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এরপর থেকে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের টাকার বিনিময়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।