বিটকয়েনের প্রলোভনে প্রতারকদের ফাঁদে ফ্রিল্যান্সাররা
দেশের ফ্রিল্যান্সারদের বিপথে নিচ্ছে সাইফুল ইসলাম নামের এক প্রতারক। দেশে নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়ার অন্যতম কারিগর বলা হয় তাকে। অথচ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে এই অপরাধী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী অনেকেই বলছেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা দুবাই থেকে অবৈধ অনলাইন জুয়ার ব্যবসা পরিচালনা করছে দেশে। আর তারা এজেন্ট ছড়িয়ে দিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। যার ফলে এখন স্কুলের বাচ্চা থেকে শুরু বিভিন্ন বয়সী মানুষ এই জুয়ার খেলায় আসক্ত হয়ে সব হারাচ্ছেন। জুয়া যেন এখন দেশের সব জায়গায় একটা নতুন আসক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এই চক্রের এজেন্ট। এসব এজেন্টদের দেশে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসতে পারে এই অনলাইন জুয়ার পেছনে কারা আছে তাদের আদ্যেপান্ত। বিভিন্ন এজেন্টদের দেওয়া তথ্যমতে এই অনলাইন জুয়ার মূলহোতা হলো সাইফুল ইসলাম।
ভুক্তোভোগীদের ভাষ্যমতে, ঢাকার গুলশানে অফিস খুলে এবং নিজে ইমর্পোটার পরিচয়ের আড়ালে শত শত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে ফ্রিল্যান্সারদের ম্যাসেজে অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে বিটকয়েন কেনায় সাইফুল। এরপর নিজেকে ব্যবসায়ী দেখিয়ে কিছু নগদ দিয়ে ডলার কিনে বাকি অর্থ বিভিন্ন অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রাতে বিনিয়োগ করায়। আর অধিক লাভের আশায় তার ফাঁদে পড়ে অনেকে পুঁজি হারিয়ে এখন অসহায়।
প্রতারক সাইফুল ইসলাম
রফিক মোহাম্মদ ভূঁইয়া নামের একজন অনলাইন ফ্রিল্যান্সার বিভিন্ন দেশে ওয়েবসাইট ডেভেলপ করে কিছু ডলার উপার্জন করেন। সাইফুল তাকে নগদ ৩ লাখ লাভ দেখিয়ে বিদেশি একটি অ্যাকাউন্ট নিয়ে দেয়। এরপর দুই মাস পর বিটকয়েন থেকে টাকা ফেরত দেবে জানায়। এখন টাকা চাইতে গেলে হুমকি দিচ্ছে। সাইফুলের এমন অসংখ্য প্রতারণার খবর বেরিয়ে আসছে। অবৈধভাবে হুন্ডি ব্যবসায় সঙ্গেও জড়িত বলে এই সাইফুলের নাম শোনা যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাইফুলকে ঘিরে একটি সিন্ডিকেটও রয়েছে এই হুন্ডি ব্যবসায়।
আরও পড়ুন:
যে গ্রহে হয় বালুবৃষ্টি
অভিযোগের সত্যতা জানতে সাইফুলের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও রিসিভ না করায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি ও ক্রাইম ইউনিটের অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, অনলাইন প্রতারণা, জুয়ার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অনেক অপকর্ম ও প্রতারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, অনলাইন জুয়া একদম নিষিদ্ধ। দেশের আইন মোতাবেক আমরা এর আগেও বেশ কয়েকবার অভিযান করেছি। আমাদের এ ধরনের অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন:
এআই টিম ভেঙে দিল মেটা
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এ ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে যে কাউকেই আইনের আওতায় আনা যাবে। মানিলন্ডারিং এবং আর্থিক জালিয়াতি কারণে দেশের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এতে দেশের রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব পড়ছে। তাই এদের ছাড় দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। ভুক্তভোগীরা নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করার পাশাপাশি সিটিটিসি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে।
নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, বিটিআরসির সহযোগিতা এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি অনলাইন জুয়ার সাইট বন্ধ করা হয়েছে। আর শুধুমাত্র ডিএমপি থেকেই এই অর্থবছরে এখন পর্যন্ত অর্ধশত জুয়ারি ও মানিলন্ডারিং’র সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।