হাসপাতালের লিফটে ‘৪৫ মিনিট’ আটকে রোগীর মৃত্যু

গাজীপুর প্রতিনিধি
১২ মে ২০২৪, ১৬:০৮
শেয়ার :
হাসপাতালের লিফটে ‘৪৫ মিনিট’ আটকে রোগীর মৃত্যু

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে ৪৫ মিনিট আটকে থেকে মমতাজ বেগম (৫০) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। আজ রবিবার সকালে হাসপাতালের ৩ নম্বর লিফটে এ ঘটনা ঘটে। পরে জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা গিয়ে লিফটে আটকে পড়া রোগীর লাশসহ অন্যদের উদ্ধার করে।

নিহত মমতাজ বেগম গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়িগাঁও গ্রামের শারফুদ্দিনের স্ত্রী। 

এদিকে, রোগী কী কারণে মারা গেছে তা জানতে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর রুবিনা ইয়াসমিনকে প্রধান করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। কমিটিতে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বা তার প্রতিনিধি হাসপাতালের রেসিডেন্সিয়াল মেডিসিন চিকিৎসক, ওয়ার্ড মাস্টার রয়েছেন।

অভিযোগ করে মমতাজের ভাগ্নে খন্দকার শাহদত হোসেন সেলিম আমাদের সময়কে বলেন, ‘শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মামিকে হাসপাতালের ১১ তলার মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা মামিকে একই ভবনের চতুর্থ তলায় থাকা কার্ডিলজি বিভাগে ট্রান্সফার করেন। মামি হাঁটাচলা করতে পারলেও তখন দ্রুত তাকে হৃদরোগ বিভাগে নেওয়ার জন্য ট্রলিতে উঠানো হয়। পরে আমরা হাসপাতালের ৩ নম্বর লিফটে উঠি। এরপর লিফটি হাসপাতালের নবম ও ১০ তলা মাঝমাঝি থাকা অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লিফটি হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায়। তখন আমি লিফটে থাকা মোবাইল নম্বরে একাধিক ব্যক্তিকে বারবার ফোন করলেও তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু ফোন করায় তারা বিরক্ত হয়ে আমাদের গালাগাল করেন। এদিকে মামি আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়লে আবারও লিফট অপারেটর ও ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানাই। এদিকে লিফট আটকে থাকার ৪৫ মিনিট পর এক পর্যায়ে কয়েকজন অপারেটর গিয়ে দরজা কিছুটা ফাঁক করে আবার দরজা বন্ধ করে তারা চলে যান। এসময় অনেক কষ্টে আমরা কয়েকজন বেরিয়ে আসতে পারলেও মামিকে তখন বের করা সম্ভব হয়নি। পরে ৯৯৯ নম্বরে পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল যায়। কিন্তু ততক্ষণে লিফটের ভেতরই মামি মারা যায়। পরে জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা দরজা খুলে মামির লাশ উদ্ধার করে। যদি সঠিক সময়ে মামিকে উদ্ধার করা যেত তা হলে হয়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব হতো। ’

লিফটের ভেতরে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতালের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতালে বিদ্যুৎ চলে গেলে লিফটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। তখন রোগী মমতাজ ও তার কয়েক স্বজনসহ লিফটের ভেতরে আটকা পড়েন। পরে লিফটের অপারেটর ও জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা লিফট ফাঁক করে ঘটনার মমতাজের লাশ ও তার স্বজনদের উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ’

এর আগে, গত শুক্রবার এই হাসপাতালের ১২তলার নামাজের কক্ষের দেয়ালের পাশের ফাঁকা স্থান দিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে এক রোগীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ করেন স্বজনেরা।