‘রাজশাহীতে আসলে আমার লাশও খুঁজে পাওয়া যাবে না’
নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কক্ষ দখল ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শাহ মাখদুম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাজবিউল হাসান অপূর্ব।
গতকাল বুধবার রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এমন অভিযোগ তোলেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র তাজবিউল হাসান অপূর্বের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা চলছে। তিনি শাহ মাখদুম হলের ২০৭ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. মিনহাজুল ইসলাম, শাহ মাখদুম হল শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মিঠু মোহন্ত ও কর্মী ইমন। অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।
মাখদুম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাজবিউল হাসান অপূর্ব ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমি দীর্ঘ দিন হল ছাত্রলীগ এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। লাস্ট ৩-৪ মাস কিছু কিছু কারণে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত আছি। দীর্ঘ সময় রাজনীতি করার ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হয়নি নোংরা রাজনীতির কারণে। আমার মাস্টার্সের পরীক্ষা চলছে, ২টা হয়েছে, ৩টা পরীক্ষা এখনো বাকি। আগামীকাল ঢাকাতে এসেছি পারিবারিক কারণে। পরীক্ষা শেষ হলে এমনিতে চলে যেতাম ক্যাম্পাস থেকে। পরীক্ষা শেষ হতে না হতে আমার রুম দখল। আমাকে হত্যার হুমকি, আমি রাজশাহী পরীক্ষা দিতে আসলে আমার লাশও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিষয়টা দুঃখজনক।’
নিজেকে আওয়ামী পরিবারের সন্তান দাবি করে তাজবিউল হাসান অপূর্ব আরও লেখেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান, বর্তমান শাহ্ মখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতি, তারপরও আমার সাথে নব ছাত্রলীগ নেতাদের এমন আচরণ আশা করিনি। খুব তাড়াতাড়ি সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করব।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি গঠন হওয়ার পর হল শাখা কমিটি কার্যত বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে অঘোষিতভাবে নেতারা হল শাখা পরিচালনা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ফেসবুক পোস্ট ডিলিট করার জন্য ফোন করেছেন জানিয়ে তাজবিউল হাসান অপূর্ব আমাদের সময়কে বলেন, ‘পোস্ট করার পর বাবু (বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি) ভাই আমাকে কল দিয়ে পোস্ট ডিলিট করা কথা বলেছেন। ডিলিট করতে না চাওয়ায় তিনি বলেন, “পোস্ট ডিলিট না করলে তোর মতো তুই থাক। আর সমাধান করতে পারলে কর।” আমি ঢাকাতেই আছি। সাদ্দাম ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে কথা বলব এ বিষয়ে।’
সব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে শাহ মাখদুম হল শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মিঠু মোহন্ত বলেন, ‘আমি না বরং উনিই (অপূর্ব) আমাকে গালাগালি করেছেন এবং হুমকি দিয়েছেন। আমরা উনার রুম দখল করতে যাব কেন? বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি সিট বাণিজ্য বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। অপূর্ব ভাইয়ের বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্যের অনেক অভিযোগ আছে। মূলত আমাদের কাছে তথ্য ছিল যে, উনি ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটা ছেলেকে উনার রুমে রেখেছেন। তাই আমরা ওই ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি যে, সে টাকার বিনিময়ে হলে আছে কি না, আবাসিক কি না।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘আমি বিষয়টি কিছুটা শুনেছি, পুরোপুরি অবগত না। আমি ক্যাম্পাসের বাইরে আছি। ক্যাম্পাসে ফিরে এটা সমাধানের চেষ্টা করব।’
শাহ মাখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, ‘দুই পক্ষের কেউই আমাকে কিছু বলেনি। রাতে ফেসবুকে অপূর্বের পোস্টটা আমি দেখেছি। এখানে একটা পরস্পরবিরোধী বিষয় আছে। এ জন্য আমি আজ সকালে হলে গিয়ে বিষয়টা জানার চেষ্টা করেছি। পুরো বিষয়টা এখনো ক্লিয়ার হতে পারিনি। অপূর্ব নিজেও কিছু ঝামেলা করে রেখে গিয়েছে। এখন ও যেভাবে দোষারোপ করছে, সেটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সেটাও একটা বিষয়। শেষ সময়ে (সাবেক কমিটির) অপূর্ব হলে বহু ঝামেলা করেছে। ওই ঝামেলাগুলোই এখন সমাধান করতে হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা। আমি আজ হলের পশ্চিম হাউজের সকল অনাবাসিক শিক্ষার্থীর তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছি সংশ্লিষ্টদের। ফাঁকা সিটে নতুন শিক্ষার্থী তোলার ব্যবস্থা করব।’