হলিস্টিক লাইফস্টাইল ও সুস্থতা
হলিস্টিক লাইফস্টাইলের কনসেপ্টটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তুলনামূলক নতুনই বলা যায়। বর্তমানে মানুষ প্রচন্ড ব্যস্ত, কে জানে কোন সুখের নেশায় তারা প্রতিদিন ছুটে চলেছে!
এই ছুটোছুটির ফাকে মানুষ মুখরোচক খাবার খেয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। অপর্যাপ্ত ঘুম, রাত জেগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর অভ্যাস, ইচ্ছেমতো ক্যালরিবহুল খাবারের স্বাধীনতা -এগুলো আসলে যান্ত্রিক জীবনে বেশ সহজ হয়ে গেছে। এই অভ্যাসগুলো যে শারীরিক সমস্যাগুলোর সৃষ্টি করে, সেগুলোই একসময় দীর্ঘমেয়াদী রোগ তৈরি করে। আর এই রোগগুলো থেকে মুক্তি পেতে তখন ছুটতে হয় বিভিন্ন ওষুধের পেছনে, যে ওষুধগুলোর ভার একজন মানুষ টেনে যায় আমৃত্যু।
আচ্ছা আমরা কি ভেবে দেখেছি, আমাদের পূর্বের জেনারেশনের মানুষ কী এভাবে ওষুধের ওপর নির্ভরশীল থাকতেন?
নাহ, তাদের কায়িক পরিশ্রমের মাত্রা বর্তমান জেনারেশনের মানুষের তুলনায় কয়েকগুন বেশি ছিল। পাশাপাশি তারা থাকতেন প্রকৃতির কাছাকাছি । বর্তমানে আরেকটি সমস্যা মহামারি আকার ধারন করেছে সেটি হলো মানসিক অবসাদ, হতাশা। বর্তমানে যে লাইফস্টাইল আমাদের, তাতে সুখের সংজ্ঞা ভাবার সময় কোথায়! ফেসবুকে দামি রেস্টুরেন্ট -এর একটা চেক-ইন কারন হয়েছে মানসিক তৃপ্তির।
এরকম চলতে চলতে মানুষের একসময় দমবন্ধ হয়ে আসে, মানুষ একটু শান্তি খোঁজে। তখনই মানুষ ভাবে হলিস্টিক লাইফস্টাইলের কথা। হলিস্টিক লাইফস্টাইল হলো আপনার সামগ্রিক সুস্থতা যেখানে আপনার শরীর, মন ও আত্মার শুদ্ধতা বা সুস্থতার জন্য আপনি জীবনযাপন করেন।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
খুব বেশী কঠিন হয়ে গেল?
চলুন একটু আলোচনা করে নিই।
প্রথমত আসি, শারীরিক সুস্থতা। নিশ্চয়ই প্রচন্ড মাথা ব্যথা নিয়ে আপনার মন ভালো থাকবে না। শরীরের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত খাদ্য ও কায়িক শ্রম। ক্ষুধা লাগা মানে কিন্তু সামনে যা পাচ্ছি খেয়ে ফেলা না; আপনাকে একটু ভাবতে হবে আপনার শরীরের ভেতর যে অঙ্গাণুগুলো আপনাকে এত সাহায্য করে যাচ্ছে, তারা আপনার গ্রহণ করা খাদ্য থেকে কতটা উপকৃত বা অপকৃত হচ্ছে। আপনি যদি শুধুমাত্র জিবের স্বাদের জন্য গাদাখানেক সোডিয়াম আর চিনি খেয়ে নেন, সেটি আপনার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য না। আপনার খাবারে অবশ্যই থাকতে পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট এর পাশাপাশি ভিটামিন, মিনারেল এর একটি ব্যালেন্স পরিমাণ। এক্ষেত্রে জীবন্ত খাবার অর্থ্যাত প্রকৃতি থেকে বাছাই করা খাবার খুবই জরুরি। পাশাপাশি সকালের খাবারের রুটিনে আপনি রাখতে পারেন ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর একটা পার্ট। অল্পে সন্তুষ্ট থাকার অভ্যাসটি আপনার খাদ্য থেকেই শুরু করতে হবে। সেই সাথে ঘাম ঝরানোর মতো এক্সারসাইজ করে নিজেকে করতে হবে ফিট।
দ্বিতীয়ত, মনের সুস্থতা। মনের সুস্থতার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম নিজেকে সময় দেওয়া শিখতে হবে। ক্রিয়েটিভ কাজে নিজেকে ফোকাসড করার প্র্যাকটিস আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দেবে।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
তৃতীয়ত, আত্মার সুস্থতা। এর জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি আপনার কৃতজ্ঞতা সর্বদা বজায় রাখার অনুশীলন করতে হবে, যেমন প্রতিদিনের প্রার্থনা। পাশাপাশি প্র্যাকটিস করতে পারেন ইয়োগা ও মেডিটেশন।
এছাড়া কিছু অভ্যাস আত্নস্থ করতে হবে, যেমন রাতে দ্রুত ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে, প্রতিদিন কিছুক্ষণ রোদে দাঁড়াবেন, পাশাপাশি অভ্যাস করতে হবে মাইন্ডফুল ইটিং এর।
আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টার আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছে শরীর, মন ও আত্নার সামগ্রিক সুস্থতায়।
সৈয়দা রূহানী
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
নিউট্রিশনিস্ট
আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টার