‘মারামারির দায় তারা কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) গেল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২০২৬ মেয়াদের নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে খল অভিনেতা মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক পদে খল অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল জয়ী হয়েছেন। যা সবারই জানা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সভাপতি মিশা সওদাগরের নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করেন নির্বাচিত সদস্যরা। এর আগে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার খোরশেদ আলম খসরু মিশাকে শপথবাক্য পাঠ করানোর কথা থাকলেও তা হয়নি। সে কাজটি করেন গুণী অভিনেতা ও নির্মাতা কাজী হায়াৎ। আর এই প্রস্তাব আসে নবনির্বাচিত কমিটির পক্ষ থেকেই। আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের পরপরই ঘটে অপ্রীতিকর ও ন্যক্কারজনক ঘটনাটি। দুই পক্ষের (শিল্পী ও সাংবাদিক) মারামারিতে আহত হন প্রায় ১০ জন সাংবাদিক। নবনির্বাচিত কমিটির নেতাদের উপস্থিতেই এমন ঘটনা ঘটে।
যদিও বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন মিশা সওদাগর ও ডিপজল। তবে এরই মধ্যে কথা ওঠেছে- ওই সময় (মারামারি চলাকালীন) নেতাদের ভূমিকা নিয়ে। হট্টোগোল শুরু হওয়ার আগেই সেটি কি মীমাংসা করা যেত না? আবার অনেকেই বলছেন, ভিলেনদের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার প্রথমদিনেই মারামারি! কতটা নিরাপদ থাকবে এবারের কমিটি?
গতকালে দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় সমিতির নেতা, শিল্পী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে। সমিতির নেতারা দুঃখ প্রকাশ করলেও, বিনোদন সাংবাদিকসহ অনেক শিল্পী বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। তারা ন্যক্কারজনক এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। আর গণমাধ্যমকর্মীরা আজ দুপুরে এফডিসির সামনে মানববন্ধনসহ পাঁচ দফার দাবি তুলেছে।
আরও পড়ুন:
স্ত্রীর কবরের পাশে পরীর নানা সমাহিত
এর আগে জানা যাক, ঘটনার মূল সূত্রপাত। শিল্পীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- এক সাংবাদিক চিত্রনায়িকা ময়ূরীর মেয়েকে প্রশ্ন করেন- ‘আপনার মায়ের সিনেমা দেখে কেমন লাগে?’ এমন প্রশ্নে ক্ষেপে যান পাশে থাকা খল অভিনেতা শিবা শানু। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হামলার ঘটনা ঘটে। আর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- ‘তাদের অভিযোগ মেনে নিলাম, তারপরও কি তারা এমন মারমুখী আচরণ করতে পারে! আর এই মারামারির ঘটনার মূল ইন্ধনদাতা চিত্রনায়ক রুবেল, জয় চৌধুরী, শিবা শানু, আলেকজান্ডার বোসহ অনেকেই।’
হামলার ঘটনার পর নেতাদের ভূমিকা কী ছিল? এমন প্রশ্নে জবাবে সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘আমরা তো সমিতির কার্যালয়ে ভেতরে ছিলাম। প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারিনি। যখন জানতে পারি, তখন গ্যাঞ্জাম অনেক বড় হয়ে যায়। চেষ্টা করেছিলাম বিষয়ে আয়ত্তে আনতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকরা তো আমাদেরই ভাই। তাদের গায়ে হাত তোলা ঠিক হয়নি। গতকাল রাতেই আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। এখানে দুই পক্ষের (শিল্পী ও সাংবাদিক) লোকই আছে। আমরা এটি দ্রুত ও সুষ্ঠু সমাধান চাই।’
আপনাদের পক্ষ থেকে আহত সাংবাদিকদের কোনো খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে মিশা বলেন, ‘আসলে আমি একটু অসুস্থ আর গতকাল খুবই ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম। তাই খোঁজ নেওয়া হয়নি। আজ যাব।’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমিতির প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু। তার ভাষ্য, ‘গতকালের ঘটনায় যে সাংবাদিকরা আহত হয়েছেন তাদের সঙ্গে দেখা করার দরকার ছিল মিশা সওদাগর ও ডিপজলদের। এটি তাদের দায়িত্ব। আর মারামারি ঘটনার দায়ও তারা কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না। যদি কোনো সাংবাদিক ময়ূরীর মেয়েকে প্রশ্ন করেই থাকে, তবে তাকে সমিতিতে ডেকে তার সঙ্গে কথা বলা যেত। তাহলে কিন্তু ভুলেও এই মারামারির ঘটনা ঘটত না। শিল্পীরা দেশের মানুষের কাছে আইডল। তাদের সংযমী হতে হয়। কিন্তু গতকালে ঘটনা তারা এর উল্টো প্রমাণ দিয়েছে।’
আপনি কেন নতুন কমিতির নেতাদের শপথবাক্য পাঠ করাননি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এবার খুব সুন্দর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা আপনারা ইতিমধ্যেই দেখেছেন। বিরোধী দল হাসিমুখেই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়েছে। তবে শপথ গ্রহণের দিনের ঘটনায় আমি খুব কষ্ট পেয়েছি, তারা আমাকে অপমান করেছে বলা যায়! শপথবাক্য পাঠ কারানো কথা ছিল আমার কিন্তু তারা সেটি করেনি। কাজী হায়াৎ সাহেবকে দিয়ে তারা শপথবাক্য পড়িয়েছেন। আর এ কারণেই আমি সেখান থেকে সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে এসেছি। এরপরেই দেখলাম এই মারামারির ঘটনা। এটা তো ঠিক না। তাদের মনোভাব অনেক বদলাতে হবে। মনোভাব সার্বজনীন করতে হবে, না হয় এটি ওদের (কমিটির) পতন ডেকে আনবে।’
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
সঙ্গে যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘শিল্পীদের নির্বাচনে আপনারাই নিউজ করেছেন- শিল্পীদের নির্বাচনে এত পুলিশ কেন? একথা চিত্রনায়ক রুবেল, নায়িকা শাবনূরও বলেছে। এখন দেখেন, কেন সেদিন এত পুলিশ ছিল সেখানে। এখন এও শুনছি, গতকাল এফডিসিতে অনেক বহিরাগত প্রবেশ করেছে। এই বহিরাগত কারা? তারা কোন পক্ষের? এর উত্তর কি কারো জানা আছে।’
এফডিসিতে মারামারিরে ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন কাজী হায়াৎ। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি না হলেও তিনি জানান, শিল্পী-সাংবাদিকরা একসূত্রে গাঁথা, গতকালের ঘটনা তিনি মোটেও আশা করেননি। ন্যক্কারজনক এমন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়েছেন চিত্রনায়ক রিয়াজ।
তার কথায়, ‘এফডিসিতে যে ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। যদিও এ ঘটনার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না, পরবর্তীতে জেনেছি। সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাদের কাজের সঙ্গে দর্শকদের সেতুবন্ধন বা মেলবন্ধন তৈরি করে দেন। সেই সাংবাদিক ভাইদের এমন নির্মমভাবে এফডিসির অভ্যন্তরে পেটানো হয়েছে, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক একটি ঘটনা। সোশ্যাল মিডিয়াতে এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও দেখে আমার খুবই খারাপ লেগেছ। চলচ্চিত্র শিল্পী ও সন্ত্রাসীর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পীরা সন্ত্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন না।’