রোজা রেখে যেভাবে চোখের যত্ন নেবেন
রোজার মাস অন্যান্য মাসের চেয়ে একটু আলাদা। এই মাসে নিত্যদিনের কাজের রুটিন থেকে খাদ্যভ্যাস, ঘুমসহ অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনতে হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শারীরিরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর ব্যাপক প্রভার ফেলে। প্রথমেই ঘুমবিষয়ে দুয়েকটি কথা বলি। রোজা রাখতে যেহেতু সেহরি খেতে হয়, তাই শেষরাতে ঘুম থেকে উঠতে হয়। রাতে তারাবির লম্বা নামাজ শেষে বেশ দেরিতে ঘুমাতে হয়। এভাবে দেখা যায়, টানা ঘুমের সূযোগ সীমিত হয়ে যায়। ফলে অনেকেরই ঘুমের ঘাটতি থেকে যায়। এতে শরীর ও মনে ক্লান্তি বা অবসাদ আসে। একইসঙ্গে চোখেও এর প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে যারা কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনে দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজ করেন, তাদের চোখে এক ধরনের অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। যেমনÑ চোখে শুষ্কতা অনুভব করা, চোখে খচখচ ভাব বা চোখ চুলকানো, অনেক সময় চোখ লাল এমনকী প্রায়শ হালকা মাথাব্যথা থাকে, যাদের আগে থেকেই চোখে শুষ্ক ভাব বা ড্রাই আই আছে, তাদের ক্ষেত্রে অস্বস্তির বিষয়টি অধিকতর পীড়াদায়ক।
এর পর খাদ্যাভ্যাস।শেষরাতে সেহরি খাওয়ার পর সারা দিন শেষে দেহে তরলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এর প্রভাব চোখেও পড়ে। যেমনÑ চোখের পানির সাময়িক স্বল্পতা দেখা দেয়। চোখের পানি বা টিয়ারের এই সাময়িক স্বল্পতার জন্য ড্রাই আই বা আই স্ট্রেইন দেখা দিতে পারে।
আই স্ট্রেইন থেকে ভালো থাকতে পরামর্শ : ন্যূনতম ৬ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। এটি মেনে চলতে হবে। ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পানি বা তরল গ্রহণ করতে হবে। কমপক্ষে ২-৩ লিটার। খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে। ইফতারিতে ফলমূল ও সবজি বেশি রাখতে হবে। ভাজাপোড়া পরিহার করতে হবে। সেহরিতে যথাসম্ভব স্বাস্থ্যকর খাবারের আয়োজন রাখতে হবে। ডিভাইস বা স্ক্রিন ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। চশমার পাওয়ার পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে, যদি চোখের দৃষ্টি সমস্যা বিদ্যমান থাকে। সর্বোপরি, প্রয়োজন হলে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। ওষুধের মধে আরিটফিসিয়াল টিয়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্য কোনো ওষুধের প্রয়োজন হলে সেক্ষেতেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোজা রেখে চোখে ড্রপ দেওয়া যাবে কিনাÑ এটি একটি কমন প্রশ্ন। কারণ চোখে ড্রপ দিলে অনেক সময় তা গলায় চলে যায় এবং তেতো স্বাদ অনুভূত হয়। অনেকেই মন করেন, এতে রোজা ভেঙে যাবে। আসলে এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
রোজা রেখে চোখের চিকিৎসা করাতে সমস্যা হবে কিনা? চোখের বেশিরভাগ সমস্যায় চিকিৎসা সাধারণত ড্রপের মাধ্যমেই করা হয়। যেহেতু ড্রপে রোজা ভাঙে না, তাই রোজা চোখের চিকিৎসায় তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। চোখের যেসব পরীক্ষা প্রয়োজন হয়, সেগুলোয়ও রোজা ভেঙে যাওয়ার তেমন আশঙ্কা নেই। বাকি থাকে চোখের অপারেশন। বর্তমানে চোখের ছানির জন্য যে আধুনিক অপারেশন করা হয়, তাতে রোজার ব্যাঘাত ঘটবে না, বিশেষ করে ফ্যাকো পদ্বতিতে অপারেশনে। তবে নেত্রনালির অপারেশনে অনেক সময় বেশ রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে অথবা অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয়, সেই ক্ষেত্রে ভেবে-চিন্তে সিদ্ভান্ত নিতে হবে।
লেখক : প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল এবং কনসালট্যান্ট, আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, ৩৮/৩-৪, রিং রোড, আদাবর, ঢাকা
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন