গর্ভবতীর রোজা রাখা, না রাখা নিয়ে কিছু কথা

অধ্যাপক ডা. আফরোজা গনি
০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
গর্ভবতীর রোজা রাখা, না রাখা নিয়ে কিছু কথা

গর্ভবতীদের মধ্যে রোজা নিয়ে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকে। কেউ বলেন রোজা রাখা যাবে, আবার কেউ বলেন যাবে না। প্রকৃতপক্ষে রোজা রাখা যাবে কিনা, তা নির্ভর করে গর্ভবতীর স্বাস্থ্য ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের ওপর; যদিও ধর্মীয়ভাবে গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা না রাখা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে।

রোজা রাখার ব্যাপারে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয় : প্রথমত, একজন গর্ভবতী নারী শারীরিকভাবে কী অবস্থায় আছেন, তার ওপর নির্ভর করে রোজা রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। যদি গর্ভবতী অসুস্থ বোধ করেন, তবে রোজা রাখা উচিত নয়। কারণ এতে তার ও তার অনাগত শিশুর ক্ষতি হতে পারে। দ্বিতীয়ত, গরমকালে গর্ভবতীর জন্য কষ্টকর। এ আবহাওয়ায় গর্ভবতী মায়ের পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে, যা মায়ের ও গর্ভের শিশুর ক্ষতির কারণ হতে পারে। গর্ভবতী শারীরিক কোনো সমস্যা না থাকলে এবং সুস্থ থাকলে তিনি রোজা রাখতে পারবেন। কারণ তিনি যতক্ষণ রোজা রাখবেন, ততক্ষণ শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি তার শরীরে মজুত থাকে।

রোজা শুরু হওয়ার আগে গর্ভবতীর পূর্বপ্রস্তুতি : রোজা রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সর্বপ্রথম একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডায়াবেটিস, অ্যানিমিয়া ও প্রি-অ্যাকলেমপসিয়া আছে কিনা, পরীক্ষা করে নিতে হবে। ডায়াবেটিস যদি থেকে থাকে, তবে রোজার সময়ে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যেতে পারে। তখন গর্ভবতী মা ও শিশু মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এছাড়া অ্যানিমিয়া আক্রান্ত মায়েরা শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন। তাই অতিমাত্রায় অ্যানিমিয়া আক্রান্ত মায়ের গর্ভাবস্থায় রোজা না রাখা ভালো। এক্ষেত্রে একজন পুষ্টিবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখতে পারলে গর্ভবতীর শরীরে পুষ্টি মান অটুট থাকে। রমজানে কফি, চা (এমনকি গ্রিনটিও) পান ও চকোলেট খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। কারণ এগুলোয় ক্যাফেইন থাকে। আর এ কারণে গর্ভবতী মা রোজার সময় পানিশূন্যতায় ভুগতে পারেন।

রোজা রাখলে করণীয় : গর্ভবতী যদি রোজা পালন করেন, তাকে অবশ্যই বিশ্রামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে, বেশি হাঁটা যাবে না, অতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না, ভারী কিছু বহন করা যাবে না। সেহরি, ইফতার ও রাতের খাবারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। রাত জাগা যাবে না। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে ও পানি পান করতে হবে।

যেসব লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন : দীর্ঘ এক মাসের এই রোজার যে কোনো সময়ে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোনো সমস্যা হলেই উচিত হবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। যদি গর্ভের সন্তান নড়াচড়া না করে, তলপেটে ব্যথা অনুভব করলে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম করার পরও যদি ঘুমঘুম ভাব হয় বা দুর্বলতা অনুভব হয়, বমি ও মাথাব্যথা হলে, জ্বরজ্বর ভাব হলে, গর্ভের শিশুর ওজন যদি না বাড়ে, ঘনঘন এবং গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হলে ডাক্তার দেখাবেন।

একজন অন্তঃসত্ত্বা মা নিজ শরীরে অন্য একটি জীবনকে ধারণ করছেন। তাই গর্ভের শিশুর সামান্যতম ক্ষতি হতে পারে- এমন কিছু করা কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। কিন্তু গর্ভবতী যদি যথেষ্ট শক্ত, সমর্থ ও সুস্থ হয়ে থাকেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অনায়াসেই রোজা রাখতে পারেন।


লেখক : অবস্ অ্যান্ড গাইনি বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক

হটলাইন : ১০৬৭২; ০৯৬৭৮৮২২৮২২