‘বাংলাদেশ ও কানাডার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে’
অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃক ৫৪তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস গতকাল মঙ্গলবার যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে গৃহীত বিশেষ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১০টায় অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাউজে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান।
পতাকা উত্তোলন শেষে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দিবসের পরবর্তী কার্যক্রম হিসেবে দুপুর ১২টায় হাইকমিশনের অডিটোরিয়ামে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ও কানাডায় বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে হাইকমিশনার ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি গণআন্দোলনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তানি শাসকদের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের ভাষণে সবাইকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতির নির্দেশনা দেন। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন:
বিদেশি হস্তক্ষেপ কাম্য নয়
হাইকমিশনার মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ধারণ করতে সবার প্রতি আহবান জানান।
ড. খলিলুর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণকারী তারই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে দেশ-বিদেশে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানান।
হাইকমিশনার মহান মুক্তিযুদ্ধে কানাডার সরকার ও জনগণের সমর্থনের জন্য দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকে দুই দেশ মানবাধিকার, উন্নয়ন, চরমপন্থা মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে হাইকমিশনার তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যকার ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাণিজ্যসহ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে।
এর আগে আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে হাইকমিশনারের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণীগুলো পাঠ করে শোনান। এরপর দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা থেকে প্রেরিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
হাইকমিশনার আলোচনা সভায় উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মঞ্চে আহ্বান করেন এবং তাদের সঙ্গে ক্যামেরাবন্দী হন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের মহান স্বাধীনতাকে বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন বলে উল্লেখ করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রতি তারা গুরুত্বারোপ করেন।
পাশাপাশি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে বক্তারা আহ্বান জানান। তারা কানাডায় বসবাসরত দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশিদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে একসঙ্গে কাজ করবেন বলে শপথ নেন।