হার্টের রোগী রোজা রাখতে পারবেন, তবে...
পবিত্র মাহে রমজানে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রোজা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে অসুস্থতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে হয়তো এমন কিছু কিছু রোগে আক্রান্ত হয়ে আছেন, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রোজা রাখছেন না বা রাখতে পারছেন না। অনেকেই হার্টের সমস্যা, হাইপারটেনশন, অ্যাজমা, পেপটিক আলসার, ডায়াবেটিসের মতো রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে। কিন্তু সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে হয়তো রোজা রাখতে পারছেন না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব রোগ ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সেক্ষেত্রে খুব সহজে রোজা রাখা সম্ভব। এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চাইলে রোজা রাখতে পারেন বলে জানিয়েছেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকও। ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রমাদান ফাস্টিং রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে গবেষকরা বলেছেন, নানা রোগের জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো পরিবর্তন করে নিলেই রোজা রাখার পাশাপাশি রোগ নিয়ন্ত্রণ বা নিরাময় সম্ভব। ধরা যাক, আপনি হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। রোজা আপনি রাখতে পারবেন তবে ইফতার, রাতের খাবার ও সেহরি খেয়ে হবে একটু সতর্ক হয়ে।
মূলত হার্টের রোগী কতখানি অসুস্থ, তার ওপর রোজা রাখার বিষয়টি নির্ভর করে। ইফতারিতে যেসব উপাদান থাকে, তা প্রায়ই ডুবো তেলে ভাজা। এগুলো সবই ট্রান্সফ্যাট, যা রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায় এবং তা হৃদরোগীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য ইফতারিতে ডুবো তেলে ভাজা খাবার পরিহার করতে হবে। হৃদরোগীর ক্ষেত্রে শরবত ক্ষতিকারক উপাদান নয়। তবে ফলের রস হলে সবচেয়ে ভালো। এছাড়া ছোলা ভাজা, ঘুঘনি, কুসুমবিহীন সিদ্ধ বা পোচ ডিম খেতে পারেন। নরম খিচুড়ি, ঘি-চর্বি ছাড়া হালিম, নুডলস, চিঁড়ার পোলাও, ননস্টিক ফাইপ্যানে তৈরি পেঁয়াজু, আলুর চপ, যে কোনো বড়া খাওয়া যেতে পারে। সঙ্গে তেঁতুল টমেটোর চাটনি থাকলে ভালো হয়। সন্ধ্যারাতে ভাত-মাছ-সবজি এবং ভোররাতে ভাত-মুরগির মাংস বা মাছ-ডাল-সবজি থাকা উচিত। দুধ পান করতে চাইলে ননীবিহীন দুধ খাওয়া ভালো। এর সঙ্গে কলা খেলেও হৃদরোগীর জন্য ভালো হয়। আর পান করতে হবে পর্যাপ্ত পানি। উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ফেইলিউর ও রক্তনালিতে যাদের ব্লক আছে, তারা নোনতা, চর্বি জাতীয় খাবার (গরু বা খাসির মাংস) খাবেন না। তাদের খাওয়ার তালিকায় রাখতে হবে শাকসবজি, ভাত, মুরগির মাংস ইত্যাদি। রোজা রাখলে দেহে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে। হার্ট সুস্থ থাকে। যে রোগীরা ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধের রিসিডিউল করিয়ে নিতে হবে অর্থাৎ লং অ্যাকটিং ওষুধ খেতে হবে।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
ইদানীং অনেক ওষুধ এমনভাবে তৈরি, যাতে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত ডোজ অনুযায়ী খেলে সারাদিন খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে হার্টের যেসব রোগীর তিন বেলা ওষুধ না খেলে শ্বাসকষ্ট হয়, অল্প পরিশ্রমে বুকব্যথা করে, হাঁপিয়ে যায়, হাত-পায়ে পানি এসে গেছে, তাদের রোজা না রাখা ভালো। দিনের বেলায় যাদের জিহ্বার নিচে ২-৩ বার ¯েপ্র নিতে হয় কিংবা মূত্রবর্ধক ওষুধ খেতে হয়, তারাও রোজা রাখতে পারবেন না। এ ধরনের রোগীরা বছরের অন্যান্য সময়ে যে নিয়মে ব্যায়াম করেন, এ সময় সেভাবে ব্যায়াম করতে পারবেন। লক্ষ রাখতে হবে, হার্টের রোগীরা যেন কখনই ভরপেট না খান। কারণ ভরা পেটেই তাদের বুকে-পেটে ব্যথা বেশি হয়।
লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং চিফ কনসালট্যান্ট মাতৃভূমি হার্ট কেয়ার লিমিটেড, ১, ১/১ রূপায়ণ তাজ নয়াপল্টন, ঢাকা। ০১৩২৪৭৩০৫১৩
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন