প্যারিস ফ্যাশন উইকে মুগলারের রানওয়েতে আজরা মাহমুদ
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিশ্রুত ফ্যাশন ব্র্যান্ড থিয়েরি মুগলারের নতুন ফল/উইন্টার ২০২৪-২৫ সংগ্রহের উপস্থাপনা। এই ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয় প্যারিসের ঐতিহাসিক লিসে কার্নো স্কুলে। থিয়েরি মুগলারের ভিআইপি অ্যান্ড মিডিয়া রিলেশনস লিড আইদা মেহনাজের অতিথি হিসেবে এই শোতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় মডেল, কোরিওগ্রাফার ও স্টাইলিস্ট আজরা মাহমুদ ও তার স্বামী শান্তা লাইফস্টাইলের প্রধান নির্বাহী দেওয়ান মুহাম্মাদ সাজিদ আফজাল।
লিসে কার্নো স্কুলের স্থাপত্য নকশা কেবল পুরনো ও দৃষ্টিনন্দনই নয়, অতীত ইতিহাসেরও সাক্ষীও বটে। এমন ঐতিহাসিক একটি স্থাপনায় প্যারিস ফ্যাশন উইকের মত বড় ইভেন্টে মুগলারের শো দেখার অভিজ্ঞতাকে অনন্য বলে মন্তব্য করেছেন আজরা।
তিনি বলেন, মুগলারের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ক্যাসি ক্যাডওয়ালেডার গাঢ় রং নিয়ে বেশি নিরীক্ষা করেন। বিশেষ করে কালো রং নিয়ে বেশি কাজ করেন। এজন্য তিনি ও তার স্বামী কালো পোশাক পরে গিয়েছিলেন।
হাউজ অব আহমেদের তৈরি নতুন ডিজাইনের শাড়ি পড়েছিলে আজরা এই শোতে পরার জন্য। সঙ্গে ছিল চামড়ার ব্লাউজের হাতায় জারদৌজি করা। এছাড়া পুরো শাড়ির জমিনে অলংকৃত ছিল পুঁতির কাজ করা। সাজিদ পরেন জুরহেমের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর মেহরুজ মুনিরের ডিজাইন করা কালো সিল্ক ও ভেলভেটের টাক্সিডো। টাক্সিডোর ভেলভেট অংশের পুরোটা পুঁতির কাজ করা।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
আজরার ভাষায়, মুগলারের ফ্যাশন শো ছিল দারুণ থিয়েট্রিক্যাল ও ড্রামাটিক। সাধারণত আমরা যেমন রানওয়েতে মডেলদের আসা যাওয়া দেখি- সেরকম নয়। এতে মোট ৪১ জন মডেল রানওয়েতে হাঁটেন। মূল ফ্যাশন শো শুরু হলে প্রথমে ৪ জন মডেল হেঁটে যান। এরপর প্রথম পর্দা উন্মোচিত হয়। পর্দার পিছন থেকে আরও মডেল বেরিয়ে আসেন। আর তাঁরা একের পর এক পর্দা ফেলতে থাকেন। এভাবে লিসে কার্নো মূল হলটাকে সবার দৃষ্টিগোচর হয়। এই হলের তিন ভাগের দুই ভাগই ছিল মূল রানওয়ে সেট, আর একভাগ দর্শকদের বসার জায়গা। মডেলরা মুগলারের সিগনেচার বোল্ড ও ফেমিনিন স্টাইলটাকে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। কালেকশনে কালোর সিংহভাগ ব্যবহার ছিল উল্লেখযোগ্য। সঙ্গে লাল ও কিছু প্রিন্টের ব্যবহার হয়েছে। সাধারণত মুগলারের সংগ্রহে প্রিন্ট খুব একটা দেখা যায় না। শোয়ের একদম শেষে ৪১ জন মডেল একসঙ্গে রানওয়েতে ফিরে আসেন। তখনই ব্যাকস্টে উন্মোচিত হয়। দেখা যায় সম্পূর্ণ ব্যাকস্টেজ সেখানে থাকা নেপথ্যের মানুষরা। যারা সবসময়ে পেছনে থেকে কাজ করে যান।
পুরো ফ্যাশন শোটি এত সুন্দর করে শুরু ও শেষ হয় যে, সামনের সারিতে থাকা ভিআইপি ও সেলিব্রেটিদের দিকে কারো সেভাবে চোখই পড়েনি। একে বলা যেতে পারে 'দ্য শো টুকওভার' মোমেন্ট, বলে মন্তব্য আজরার।
তিনি জানান, এই ফ্যাশন শোতে ছিলেন মিয়া খলিফা, ব্রুকলিন বেকহাম, নিকোলা পেল্টজ, জুলিয়া ফক্স, কোরিয়ান সুপারস্টার জুংহুয়া, বারবারা পেলভিনদের সব সেলিব্রেটিরা ছিলেন ফ্রন্ট রোতে।
আজরা বলেন, এই আয়োজনে আমি কেবল উপস্থিতির জন্য নয় বরং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখা ও বোঝার জন্যও গিয়েছি। জানার চেষ্টা করেছি শো আয়োজনের নানা দিক। আর বুঝতে চেষ্টা করেছি আমাদের থেকে তারা কোথায় আলাদা।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
আজরা জানান, মুগলারের শোয়ের আসল সৌন্দর্য হলো, এই ব্র্যান্ড সবসময়ে ‘লেভেল অব মিস্ট্রি’কে বজায় রাখে। এজন্য অনুষ্ঠানস্থলে মুগলারের কোন ব্র্যান্ডিং বা সাইনেজ ছিল না। শো শুরু হয় রাত ৯টা ৫ মিনিটে। আর শেষ হয় সোয়া ৯টায়। শোর দৈর্ঘ্য ছিল কেবল ১০ মিনিট। আজরার মতে, এটাই বুঝতে ব্যর্থ হন আমাদের দেশের অনেক ডিজাইনাররা। তারা মানতে চান না শোয়ের ব্যাপ্তি কম হলেই সবচেয়ে সুন্দর হয়।
তিনি বলেন, আমাদের মডেলিংকেও একটা একটা মানে উন্নীত করতে আমরা সক্ষম হয়েছে। টেকনিক্যাল জায়গা থেকে আমরা অবশ্যই পিছিয়ে আছি, তবে সেটাও খুব একটা নয়।
শো শেষ হওয়ার পর অনেকক্ষণ চুপ করে বসেছিলেন জানিয়ে আজরা বলেন, সেখানে আমার উপস্থিতিকেই আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এখনো মনে হলে আমার চোখ ভিজে ওঠে। এই আসরে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারাটা আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রেরণাদায়ক অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। এতটা বছর ধরে কাজ করে আমি আমার দেশকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে পেরেছি। কোনো সন্দেহ নেই এটাই আমার পরিতৃপ্তি।
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
ছবি: প্রত্যয় আহমেদ ও ম্যাথিয়াস গোমেজ