নবজাতকের যত্ন নিতে হবে খুবই বুঝেশুনে

অধ্যাপক ডা. শাহীন আক্তার
০৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
নবজাতকের যত্ন নিতে হবে খুবই বুঝেশুনে

জন্মের পরপরই নবজাতককে বুকের দুধ পান করাতে শুরু করানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব, এমনকি গর্ভফুল পড়ার আগেই শিশুকে মায়ের বুকে দিতে হবে। শিশুর জন্মের পর এক থেকে দুদিন বুকের দুধ ভালোভাবে আসে না। তখন ঘন হালকা হলুদ রঙের যে শালদুধ বের হয়, সেটি পুষ্টিগুণে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় উচ্চমানের। দুধ খাওয়াতে শুরু করলে মায়ের বুকে দুধের প্রবাহ বাড়বে এবং শিশুটিও দ্রুত দুধ খাওয়া শিখে যাবে।

উষ্ণতা : উষ্ণতার জন্য শিশুকে মোটা তোয়ালে দিয়ে না পেঁচিয়ে রেখে কয়েক স্তরের নরম সুতি কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো ভালো। অতিরিক্ত রঙচঙ, জরিযুক্ত বা সিনথেটিক কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো উচিত নয়। বাজার থেকে কাপড় কিনে সরাসরি শিশুকে না পরিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে তার পরই পরানো উচিত।

নাভির যত্ন : চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত ধাত্রী বা নার্স প্রসবের পর পরই শিশুর নাভিটি জীবাণুমুক্ত ব্লেড দিয়ে কাটবেন এবং দুটি জীবাণুমুক্ত ক্ল্যাম্প বা সুতা দিয়ে নাভি বেঁধে দেবেন। এরপর নাভিতে একবার ঘন স্পিরিট লাগিয়ে দিতে হবে। বাসায় আনার পর নাভিতে কোনো ধরনের সেঁক দেওয়া যাবে না। কোনো মলম বা স্পিরিট দেওয়ার দরকার নেই। নাভি শুকনো ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নাভি ঝরে যাওয়ার পরও নাভিমূলে কোনো রকম সেঁক বা মলম দেওয়া যাবে না।

শিশুর ত্বকের যত্ন : শিশুর ত্বকের জন্য সরিষার তেল উপকারী নয়; তা যত খাঁটিই হোক। অলিভ অয়েল ভালো। শিশুকে বেবি সোপ দিয়ে গোসল করানোর আগে বা পরে অলিভ অয়েল দিয়ে মেসেজ করাতে পারেন। মাঝে মধ্যে সকালের নরম রোদে শিশুকে রাখা যায়। তবে তাতে যেন ঠাণ্ডা না লাগে। নবজাতকের চোখ বা ভ্রƒতে কাজল দেবেন না। এতে চোখে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।

অতিথি : নবজাতককে দেখতে আত্মীয়-স্বজনের ভিড় মোটেও কাম্য নয়। অনেকের শ্বাসতন্ত্র বা ত্বকের সংক্রমণ থেকে নবজাতক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

বিপদ চিহ্ন : যেসব লক্ষণ দেখলে নবজাতককে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে, সেগুলোই বিপদ চিহ্ন। যেমন, ১০০ ডিগ্রি বা এর বেশি জ্বর আসা, শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ৯৭ ডিগ্রির নিচে নেমে এসে ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া। শিশু বুকের দুধ টানতে না পারলে, খেতে আগ্রহী না হলে, ঘন ঘন শ্বাস নিলে অর্থাৎ প্রতিমিনিটে ৬০ বারের বেশি শ্বাস নিলে, বুকের খাঁচা দেবে গেলে, নিস্তেজ হয়ে গেলে, বেশি নড়াচড়া না করলে বা খিঁচুনি হলে, জন্ডিস দেখা দিলে অর্থাৎ হাত-পায়ের তালু হলুদ হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কারণ এগুলো কোনো না কোনো রোগ বা শারীরিক সমস্যার লক্ষণ।

আরও যেভাবে যত্ন নেবেন : শিশুর যত্ন প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ব্যাপার হলো, প্রসূতির যত্ন। প্রসব-পরবর্তী অনেক মা খুব অসহায় বোধ করেন। মাকে পরিপূর্ণ মানসিক সহায়তা দেওয়া জরুরি। মায়ের খাবার যেন সুষম হয় অর্থাৎ খাবারে যেন ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেলসহ সব খাদ্যোপাদান থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। অনেক সময় প্রসূতি নিজের শারীরিক সমস্যা ও শিশুর যত্নে ব্যস্ত থাকার কারণে ঘুমাতে পারেন না। পরিবারের সবাই মিলে নতুন মাকে ঘুমানোর সুযোগ করে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মা সুস্থ থাকলে, শিশুও সুস্থ থাকবে।

লেখক : নবজাতক ও শিশু-কিশোর বিভাগ, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২