নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ফের যৌন হয়রানির অভিযোগ

ঢাবি প্রতিবেদক
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৩৪
শেয়ার :
নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ফের যৌন হয়রানির অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আবারও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এবার ভুক্তভোগী রাজধানীর আরেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। অধ্যাপক নাদির জুনাইদ ‘অতিথি শিক্ষক’ হিসেবে সেখানে একটি কোর্স পড়িয়েছিলেন। এ ঘটনায় ঢাবি এবং ওই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী।

আজ বুধবার সকালে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমানের কাছে অভিযোগপত্র দেন ওই ভুক্তভোগী।

অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাবি প্রক্টর বলেন, ‘অভিযোগপত্র ই-মেইলেও পেয়েছি, হার্ডকপিও পেয়েছি। অভিযোগপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে বিয়ের কথা বলে দিনের পর দিন যৌনতা সম্পর্কিত অশ্লীল কথোপকথন, কথা বলতে না চাইলে শ্রেণীকক্ষে মানসিক নিপীড়ন, ধর্মচর্চা, পোশাক ও গ্রাম থেকে আসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগ এনেছেন।

অভিযোগপত্রে অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে একজন ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ ও ‘সিরিয়াল হ্যারাসার’ বলেও আখ্যা দেন অভিযোগকারী। ওই ছাত্রী দাবি করেন, তিনি নিজেই অন্তত আরও তিনজন ছাত্রীর কথা জানেন, যাদের অধ্যাপক নাদির জুনাইদ বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং একইভাবে প্রতারণা করেছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগপত্রে বলেন, ‘(ঘটনার সময়) আমি ক্লাসের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হওয়ায় অধ্যাপক নাদির জুনাইদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হত। প্রথমত উনি নিয়মিত আমাকে ফোন দিতেন। কিন্তু সমস্যা হলো, উনি ব্যক্তিগত অনেক তথ্য জিজ্ঞেস করতেন। আমাকে এমনও জিজ্ঞেস করেছেন, আমার বয়ফ্রেন্ড আছে কি না। এ সব নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে চাইতেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘উনি আমাকে যখন এইভাবে ফোন বা ভিডিও কল দিতেন, আমি খুবই বিব্রত হতাম। আমি প্রায় ওনার ফোন না ধরার চেষ্টা করতাম, কিন্তু সেটার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পরবর্তী ক্লাসে দেখা যেত। ফোন না ধরায় আমাকে ক্লাসে নানাভাবে হেনস্তা করতে চাইতেন। ক্লাসে এভাবে হেনস্তার পর উনি আবারও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। অনেকটা বাধ্য হয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে ওনার ফোন এবং ভিডিও কল রিসিভ করতাম। তখন ভিডিও কলে বলতেন, ‘‘একটু তোমার চেহারাটা দেখি, তোমার চুলটা একটু দেখি, তোমার জুম পিক দেখি”।’  

ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগপত্রে আরও লেখেন, ‘উনি আমাকে শারীরিক স্পর্শ বা সেরকম কিছু করেননি। কিন্তু বিয়ের কথা বলে আমার সঙ্গে দীর্ঘদিন কথোপকথন চালিয়ে গেছেন। উনি প্রায় অশ্লীল কথাবার্তা বলতেন। নানান রকম যৌন উত্তেজনামূলক কথা আমার সঙ্গে বলতে চাইতেন। সবসময় অন্তরঙ্গ কথা বলার প্রতি ওনার বিশেষ আগ্রহ থাকত। আমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গা নিয়ে তিনি আমাকে প্রশ্ন করতেন। আমার পোশাক নিয়েও অযাচিত মন্তব্য করতেন। বলতেন, আমি কেন ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরি না। কেন বাংলাদেশের মেয়েদের পোশাক এত বাজে?’

অভিযোগপত্রে তিনি লেখেন, ‘নানারকম অশ্লীল কথাবার্তা তিনি (অধ্যাপক নাদির জুনাইদ) গল্প আকারে বলতেন। যেমন কোন সিনেমায় নায়ক নায়িকা কীভাবে অন্তরঙ্গ হলো, নায়ক নায়িকার সঙ্গে কী কী করল, এসব উনি খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে শোনাতেন এবং নানাভাবে বোঝাতেন যে উনি এইসব করতে চান। এসব ঘটনায় মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে তাকে সাইকোলজিস্টের কাছে যেতে হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।’

তিনি উল্লেখ করেন, অধ্যাপক নাদির জুনাইদ শুরুতে যারা ‘ভালনারেবল’ মেয়ে, অর্থাৎ দেখতে সুন্দর, কিন্তু জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনিরাপত্তায় ভোগে বা দ্বিধান্বিত, তাদের টার্গেট করেন। একপর্যায়ে নানান ছলছুতোয় তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ গড়ে তোলেন এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। সুযোগ বুঝে বিয়ের প্রস্তাবও দেন। কিন্তু এটা শুধুই একটা ফাঁদ। কেননা, উনি একজন অধ্যাপক, আর্থিক নিরাপত্তা অত্যন্ত সুদৃঢ়, দেখতে সুদর্শন; স্বাভাবিকভাবে মেয়েরা তার দিকে আকৃষ্ট হয়। এটাকে ব্যবহার করেই তিনি সবার সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়ে তোলেন যেখান থেকে তিনি বাচিক ও মানসিকভাবে যৌনসুখ লাভ করতে পারবেন।

ভুক্তভোগী লেখেন, ‘ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের আড়ালে পুরো ব্যাপারটা তিনি এমনভাবে মঞ্চস্থ করেন, যেন তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না থাকে, তাকে দোষী বানানো না যায়। এটি প্রতিষ্ঠিত করতে শিক্ষার্থীদের তিনি তার বাড়িতেও নিমন্ত্রণ জানান।’

নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারেরও অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী। চ্যাটিং করার পর ওসব আইডি ডিঅ্যাক্টিভ করে দিতেন বলেন জানান ভুক্তভোগী।

এ বিষয়ে একাধিকবার অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে ফোন দিলেও পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক নারী শিক্ষার্থীও নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন।