মালয়েশিয়ায় প্রতারণার শিকার ১০৪ বাংলাদেশি, কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রতারণার শিকার ১০৪ বাংলাদেশিকে রাজধানী কুয়ালালামপুরের চেরাসের একটি বাসায় আটকে রাখা হয়েছে। এ খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পর সরকারের নজরে আসলে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার।
সরকার বলছে, বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতারণাকারী চেরাসের পেমবিয়ানান রিকোলার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এসডিএন বিএইচডির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল এবং মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম বলেছেন চেরাসের যে কোম্পানিটি গত নভেম্বরে শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে এসেছিল তারা তাদের চাকরি দেয়নি এবং তাদের উপযুক্ত থাকার জায়গা বা পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করেনি।
সাইফুদ্দিন এবং সিম একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, নিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে উভয় মন্ত্রণালয়ই সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা নেবে।
নিয়োগদাতারা যারা বিদেশী কর্মী নিয়োগ করে তাদের অবশ্যই শ্রমিকদের যত্ন নিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে তারা সরকারের আইনী নির্দেশনা মেনে চলছে। অভিবাসী শ্রমিকদের একটি অন্তরবর্তী বীমা আদেশ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আনার আগে নথিভুক্ত করার জন্য পুত্রজায়া অভিবাসন বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
২৪ দিনে রেমিট্যান্স এল ১৪৯ কোটি ডলার
সাইফুদ্দিন ও সিম সম্মত হন যে শ্রমিকদের পাসপোর্ট রাখার জন্য ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৯/৬৩-এর অধীনে নিয়োগকর্তাদের আইনিব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে এবং তাদের বেতন দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য কর্মসংস্থান আইন ১৯৫৫-এর আওতায় আসতে হবে।
যথাযথ বাসস্থান সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য তারা কর্মচারীদের ন্যূনতম মানদণ্ডের আবাসন এবং সুযোগ-সুবিধা আইন ১৯৯০-এর অধীনে অভিযোগের মুখোমুখি হবে এবং ব্যক্তিদের পাচার বিরোধী এবং অভিবাসী আইন (আটিপসম) ২০০৭-এর অধীনে তদন্ত করা হবে।
বিদেশী কর্মীদের জন্য তাদের অবশিষ্ট কোটা এবং তাদের অনুমোদন পত্র বাতিল করা ছাড়াও, নিয়োগকর্তারা ভবিষ্যতে বিদেশী কর্মীদের জন্য আবেদন করা থেকে কালো তালিকাভুক্ত হবে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এন্ডি হলের বরাত দিয়ে ফ্রি-মালয়েশিয়াটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০০ জনের বেশি শ্রমিকের জন্য একটি টয়লেট দেওয়া হয়েছে এবং একটি কক্ষের মধ্যে গাদাগাদি করে তাদের থাকতে হচ্ছে। তাদের ভাত, ডাল ও আলু ভর্তা খাওয়ানো হচ্ছে। এক কর্মী দাবি করেছেন, কাজের অবস্থা জানতে চাওয়ার পর চার দিন তাকে খাবার দেওয়া হয়নি।
এন্ডি হল বলছেন, প্রতিশ্রুত চাকরি পাওয়ার পরিবর্তে তাদের কোনো কাজ নেই এবং কোনো আয় নেই। এ পরিস্থিতি চরম বিপাকে রয়েছেন ১০৪ বাংলাদেশি কর্মী।
২০২৩ সালের নভেম্বরে কাজের ভিসায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পরও চাকরি পাননি তারা। আটক অবস্থায় দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশি কর্মীদের অধিকার নিয়ে দেশটিতে কাজ করা ব্রিটিশ শ্রম অধিকার কর্মী এন্ডি হল বলেছেন, ওই ১০৪ কর্মী মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ১৯ হাজার ৫০০ থেকে ২১ হাজার ৭০০ রিঙ্গিত নিয়োগ ফি দিয়েছে। তাদের ভালো জীবনযাত্রার সুবিধা ও উচ্চ বেতনের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। চেরাসের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগ দিয়েছিল বলে জানান তিনি। তিনজন শ্রমিক বলেছেন, নিয়োগের ফি দিতে গিয়ে তাদের ঋণে পড়তে হয়েছে।
প্রতারণার শিকার এক কর্মী এন্ডি হলকে বলেছেন, আমি বিশাল ঋণের মধ্যে পড়ে গেছি। বিভিন্ন উৎস থেকে টাকা ধার করার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে বেতন পেয়ে মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করব। কিন্তু এখন আমি পরিশোধ করতে অক্ষম। ঋণদাতারা আমার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে।
কর্মীরা জানান, সেখানে যাওয়ার পর তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয় এবং তারা শারীরিক ও মৌখিক নির্যাতনের শিকার হয়। এ ছাড়া তাদের যিনি বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করেন, তিনি তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।