লুঙ্গি পরে চলাফেরা করায় ছাত্রকে মারধর, যা বলল যবিপ্রবি ছাত্রলীগ
নেতার সামনে লুঙ্গি পরে চলাফেরা ও সালাম না দেওয়ার অভিযোগে এক ছাত্রকে কক্ষে আটকে মারধরের ঘটনাকে ‘ব্যক্তিস্বার্থে মিথ্যা অভিযোগ’ বলে জানিয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগ। আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনের (টিএসসি) দ্বিতীয় তলায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, দুই বন্ধুর মধ্যে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে একটি পক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে। এ সময় যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সালসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল বলেন, ‘সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসাইন্স (এফএমবি) বিভাগের মো. মানজুরুল হাসান নামে এক শিক্ষার্থীর অভিযোগের বিষয়ে আপনারা অবগত আছেন। আমার সহযোদ্ধা যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সোহেল রানা ভাইসহ যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে জড়িয়ে শহীদ মসিয়ূর রহমান হল প্রভোস্ট বা থানায় সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার সাথে সেদিনের প্রকৃত ঘটনার কোনো মিল নেই।’
তিনি বলেন, ‘মো. মানজুরুল হাসান নামে যে শিক্ষার্থীকে দিয়ে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সভাপতি সোহেল রানা ভাই তাকে চেনে না। আর শুক্রবার রাতে ওই শিক্ষার্থীর সাথে আমার এবং সভাপতির দেখাও হয়নি। এখানে সালাম দেওয়া, না দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। আর সে লুঙ্গি পরে থাকবে নাকি প্যান্ট পরে থাকবে, সেটাও তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু রাত ১১টার দিকে হঠাৎ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ২০-৩০ জন কর্মীকে নিয়ে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতির রুমে (৩০৬ নম্বর) হামলা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী রকির সাথে মো. মানজুরুল হাসানের পূর্বে কোনো বিষয় নিয়ে মতানৈক্য থাকতে পারে। শুক্রবার রাতে সে বিষয়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হলেও হতে পারে। কিন্তু এই বিষয়টিকে পুঁজি করে একটা পক্ষ সুবিধা নিতে আমার সভাপতিসহ আরও কয়েকজন নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি জানান, মো. মানজুরুল হাসানের অভিযোগ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার রাতের প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধানে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. নাজমুস সাকিব বলেন, ‘যখন শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ২০-৩০ জন কর্মীকে নিয়ে সভাপতির রুমে হামলা করে, তখন আমি পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত হই। আমি এ ঘটনার সুস্থ্য তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।’
এ বিষয়ে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস. এম. ইকরামুল কবির দ্বীপ বলেন, ‘আমিসহ আমার বিভাগের ছোট ভাইয়েরা সভাপতির ৩০৬ নম্বর কক্ষে জানতে গিয়েছিলাম, আমার ছোট ভাই মঞ্জুরুলকে কেনো মারা হয়েছে? কিন্তু তারা সিনক্রিয়েট করলে আমি সেখান থেকে চলে আসি। আর নাজমুস সাকিব তো সেখানে ছিলই না। তাকে হেনস্তা করার কোনো প্রশ্নই উঠে না।’
যাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ‘ছাত্রলীগের কিছু বিপদগামী নেতাকর্মী ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য অপকর্মের মাধ্যমে ছাত্রলীগের নাম খারাপ করছে। আমাকে জড়িয়ে বদনাম দেওয়া হচ্ছে। যে ছেলে আমার নামে থানায় জিডি করেছে, তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। রকি নামের এক শিক্ষার্থীর সাথে মনজুরুলের বিরোধ ছিল বলে জানতে পেরেছি। এই বিষয়টির সাথে আমার নাম জড়িয়ে একটা মহল আমার বদনাম করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো.আবির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মান্নান রিয়াজ ও মোহম্মদ খালেদ মোশাররফ, সদস্য মোহাম্মদ হামিম ফয়সাল আবিদ, রাশেদ হাসান ও আব্দুল্লাহ আল মারুফ। যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইছাদ হোসেন, ছাত্রলীগ কর্মী বিপুল শেখ ও মুশফিকুর রহমান প্রমুখ।