রক্তচাপ বৃদ্ধির মতো চোখেরও চাপ বাড়ে
গ্লুকোমা চোখের রোগ এবং এমন একটি জটিল অবস্থা, যেখানে চোখের প্রেসার বা চাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি থাকে। ফলে চোখের স্নায়ু বা রেটিনাল নার্ভ ফাইবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শেষ পর্যন্ত তা অন্ধত্ব ডেকে আনে। এই চাপ রক্তচাপের মতোই। এটিকে বলা হয় ইন্ট্রা অকুলার প্রেসার বা আইওপি। রক্তচাপ বৃদ্ধির মতোই চোখের চাপ বেড়ে যেতে পারে। গ্লুকোমার উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, এটি সবসময়ই অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। তাই গ্লুকোমাকে কোনোমতেই অবহেলা করা যাবে না।
তবে মনে রাখতে হবে, চোখের এই চাপ মোটেও রক্তচাপের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। চোখের ভেতরে পানির মতো একধরনের তরল পদার্থ আছে, যা চোখের নির্দিষ্ট আকার-আকৃতি বজায় রাখে এবং পুষ্টির জোগান দিতে থাকে। এই তরল চোখের ভেতরেই নির্দিষ্ট হারে তৈরি হয় এবং নির্দিষ্ট পথ দিয়ে বের হয়ে এসে চাপের ভারসাম্য বজায় রাখে। কোনো কারণে তরলটি যদি ঠিকমতো বের হতে না পারে কিংবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত তৈরি হয়, তখন চোখের চাপ বেড়ে যায়। এই অবস্থার নামই গ্লুকোমা। বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের অন্ধত্বের কারণ এই গ্লুকোমা। তবে সচেতনতা আর নিয়মিত চোখের চিকিৎসায় এই অন্ধত্ব রোধ করা যায়।
যে কারণে চোখের চাপ ক্ষতিকর : আমাদের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ু অপটিক নার্ভ চোখের অতিরিক্ত চাপের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চাপে অপটিক নার্ভের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে রোগী অন্ধ হয়ে যায়। তাই বলে গ্লুকোমা হলেই যে চোখ অন্ধ হয়ে যাবে কিংবা এর কোনো চিকিৎসা নেই, এমন ধারণা মোটেই সত্য নয়। তবে চিকিৎসা শুরুর আগে দৃষ্টির যে ক্ষতি হয়ে যায়, তা পূরণ করা সম্ভব হয় না। চিকিৎসার মাধ্যমে যতটুকু দৃষ্টিশক্তি অবশিষ্ট থাকে, তা টিকিয়ে রাখা যায়। কাজেই গ্লুকোমা হলে দুশ্চিন্তা না করে সময়মতো চিকিৎসা নিন।
চিকিৎসা : গ্লুকোমা যে কারও হতে পারে। তবে চল্লিশোর্ধ্ব বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, মাইনাস পাওয়ার অথবা যাদের মা-বাবা গ্লুকোমার রোগী, তাদের নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বছরে দু-তিনবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে চোখ পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
চোখ পরীক্ষা করা মানে কেবলই চশমার পাওয়ার দেখা নয়, বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে চোখের ভেতরকার চাপও মাপা হয়ে থাকে। যদি এতে সমস্যা পাওয়া যায়, তা হলে আরও কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। চোখের চাপ স্বাভাবিক রাখতে চোখের ড্রপ বা খাওয়ার ওষুধ ব্যবহার করতে হতে পারে। দরকার হলে তরল বহির্গমনের অবরুদ্ধ পথ খুলে দিতে অস্ত্রোপচারও করা লাগতে পারে। নিয়মিত চেকআপ আর যথাসময়ে চিকিৎসা নিলে চোখের চাপ কমে আসবে। তাই আসুন, গ্লকোমা সম্পর্কে সচেতন হই এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধ গড়ে তুলি।
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
গ্লুুকোমা বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ আই হসপিটাল
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
মালিবাগ শাখা, ঢাকা
০১৭৮৯৭৭৯৯৫৫, ০৯৬১৩৯৬৬৯৬৬