শিশুর হৃদয়ে সমস্যা দেখা দিলে যা করবেন
শিশুরও হৃদয়েও নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। যেমন- জন্মগত হার্টের অসুখ, বাতজ্বরজনিত হার্টের রোগ, সংক্রমণজনিত হার্টের রোগ ইত্যাদি। বাতজ্বরজনিত হার্টের অসুখ অবশ্য অনেকটাই কমে এসেছে আমাদের দেশে। কিন্তু ইদানীং হার্টের একধরনের বিরল রোগ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এ রোগটির নাম কাওয়াসাকি ডিজিজ। জাপানি চিকিৎসক তমিসাকু কাওয়াসাকি ১৯৬৭ সালে প্রথম এ রোগটি শনাক্ত করেন। কাওয়াসাকি ডিজিজ আসলে রক্তনালির বিরল রোগ। শিশুদের জন্মগত হার্টের রোগ, বাতজ্বরজনিত হার্টের রোগের পর পরই এই রোগের অবস্থান বলে মনে করা হয়। সাধারণত পাঁচ বছরের নিচের শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
সাধারণত শীতের শেষে ও বসন্তে এই রোগ বেশি শনাক্ত হয়। রোগের কারণ হিসেবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার দুর্বলতাকে দায়ী করা হয়। কোনো কোনো জীবাণুর প্রভাবেও এই রোগটি দেখা দিয়ে থাকে। একইসঙ্গে জেনেটিক কারণও কাওয়াসাকি ডিজিজের জন্য দায়ী।
যেভাবে শনাক্ত করা যায় : পাঁচ দিনের বেশি জ্বর স্থায়ী হওয়া, চোখ লালচে তবে সেখানে কোনো পুঁজ না থাকা, ঠোঁট লাল ও ফাটা-ফাটা, জিহ্বা লালচে হওয়া, গলার পেছনে বেশ লালচে হয়ে দগদগে হওয়া, গলার চারপাশের লসিকাগ্রন্থিগুলো ফোলা, শরীরজুড়ে একধরনের ফুসকুড়ি বা র্যাশ হওয়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। এই সময় শিশুর হাত-পা একটু ফোলা ফোলা ও বেশ লালচে দেখা যায়।
হার্টের যে করোনারি রক্তনালি আছে, সেগুলো ফুলে ফেঁপে ছিঁড়ে যেতে পারে। অনেক সময় রক্তপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এতে হার্টে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন-হার্টের বাইরের আবরণ ফুলে পানি জমতে পারে (পেরিকার্ডাইটিস), হার্টের পেশিতে প্রদাহ হতে পারে (মায়োকার্ডাইটিস)। অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন হতে পারে। হার্টের ভেতরের আবরণে প্রদাহ বা অ্যান্ডোকার্ডাইটিস হলে ভালভেও প্রদাহের সৃষ্টি করে। হার্টের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশেও এর প্রভাব পড়ে।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
সন্দেহ হলে জরুরিভিত্তিতে হার্টের ইকোকার্ডিওগ্রাফি করলে কাওয়াসাকি ডিজিজ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
চিকিৎসা : এ রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। শিরাপথে ইমিউনোগ্লোবুলিন প্রয়োগ করা হয়। এতে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশের বেশি। এই ওষুধের পরও না সারলে স্টেরয়েড ইনজেকশন এবং কিছু কিছু বায়োলজিক্যাল ওষুধ ব্যবহার করা হয়। সুনির্দিষ্ট সময়কাল ধরে এই রোগের ফলোআপ করতে হবে। এই রোগের কারণে হৃদযন্ত্রে কোনো জটিলতা রয়ে গেল কিনা, সেটি পর্যবেক্ষণ করতেই ফলোআপের প্রয়োজন দেখা দেয়। এই ওষুধ দেওয়ার পর কিছু কিছু টিকা দেওয়া উচিত নয়। বিষয়টি চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, শিশুরোগ বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
চেম্বার : আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
মিরপুর-১০, ঢাকা। ১০৬৭২