পুলিশ হেফাজতে বডিবিল্ডার ফারুকের মৃত্যু, ডিবিকে মামলা তদন্তের নির্দেশ

আদালত প্রতিবেদক
৩১ জানুয়ারী ২০২৪, ১৭:৩৪
শেয়ার :
পুলিশ হেফাজতে বডিবিল্ডার ফারুকের মৃত্যু, ডিবিকে মামলা তদন্তের নির্দেশ

পুলিশ হেফাজতে বডিবিল্ডার ফারুক হোসেনের মৃত্যুর অভিযোগে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলামসহ পুলিশের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে করা মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে ডিবিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার নিহতের স্ত্রী ইমা আক্তার হ্যাপী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলার আবেদন করেন। শুনানির পর আদেশ অপেক্ষমান রাখেন আদালত।

সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল মামলা ও আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মামলায় অপর আসামিরা হলেন বংশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইমদাদুল হক, আবু সালেহ, মাসুদ রানা ও বুলবুল আহমেদ।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টায় ফারুক হোসেন খাজা দেওয়ান সিং লেন লালবাগের বাসা থেকে ব্যক্তিগত কাজে বের হন। এক ঘণ্টা পর ফারুক হোসেনের স্ত্রী হ্যাপীকে ফোন দিয়ে জানান, তাকে সন্দেহজনকভাবে কায়েতটুলী ফাঁড়ির কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করছেন। দুই বছর বয়সী সন্তানকে কোলে নিয়ে সেখানে ছুটে গিয়ে দেখেন, পুলিশের সদস্যরা ফারুককে মারধর করে আটকে রেখেছেন।

হ্যাপী তখন উপস্থিত (এসআই) ইমদাদুল হক, মাসুদ রানা, বুলবুল আহমেদসহ অন্যদের হাত-পা ধরে স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানান। তখন ইমদাদুল হক তাকে বলেন, ‘ফারুক অনেক বড় ক্রিমিনাল, তাদের গালিগালাজ করেছেন। তাকে এমনিতে ছাড়া যাবে না। আর ছাড়তে হলে এক লাখ টাকা লাগবে।’

হ্যাপী জানান, তার স্বামী সিটি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েবের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। আগে বডিবিল্ডার ছিলেন, মিস্টার বাংলাদেশ হয়েছিলেন। তার ছোট তিন সন্তান রয়েছে। তার আয়েই সংসার চলে। তাকে ছেড়ে দিন। পরে তারা কমিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন এবং তাকে কুপ্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় ফারুককে আরও মারধর করেন।

আসামিরা দাবি করে জানান, ফারুক একজন মাদক ব্যবসায়ী। তারা কিছু করতে পারবেন না। এ বিষয়ে তাদের বড় স্যার জানেন। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশের সদস্যরা ফারুককে মোটরসাইকেলে করে বংশাল থানার দিকে নিয়ে যান।

মামলায় আরও বলা হয়, থানায় গিয়ে পরিদর্শক মাইনুল হোসেনের হাত-পা ধরে আকুতি-মিনতি করে স্বামীকে ছেড়ে দিতে বলেন হ্যাপী। তাতেও কাজ হননি। তারা হ্যাপীকে পরের দিন সিএমএম আদালতে যোগাযোগ করতে বলেন।

পরের দিন হ্যাপী আদালতে যান স্বামীর খবর নিতে। সেখানে স্বামীর সাক্ষাৎ পান। ফারুক স্ত্রীকে মারধরের কথা জানান এবং তার কিছু হলে আদালতে বিচার চাইতে বলেন। খোঁজ নিয়ে হ্যাপী জানতে পারেন, ফারুকের বিরুদ্ধে ১৫০ গ্রাম গাঁজার মামলা দেওয়া হয়েছে। পরে সন্ধ্যা ৬টায় হ্যাপী বাসায় ফিরে যান।

গত ১৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে এক ব্যক্তি হ্যাপীকে ফোন করে জানান, ফারুক মারা গেছেন। হাসপাতালের মর্গে গিয়ে স্বামীর মরদেহ দেখতে পান হ্যাপী। এ সময় তিনি ফারুকের গলায়, বুকে, পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখেন।