হৃৎপিণ্ড বৈকল্যের কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ডা. শরদিন্দু শেখর রায়
১২ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
হৃৎপিণ্ড বৈকল্যের কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

হৃৎপিণ্ড বৈকল্য বা হার্ট ফেইলিউর হলো, হৃদযন্ত্র ঠিকঠাক কাজ না করা। এটি রোগ নয়, হৃদরোগের উপসর্গ। তাই এটি ধরা পড়লে আগে কারণ খুঁজে বের করা দরকার। হৃৎপিণ্ডের মূল কাজ হলো, সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা। প্রতিমুহূর্তে অঙ্গটি শরীরে জালের মতো ছড়ানো রক্তনালিতে রক্ত সরবরাহ করে থাকে। সরবরাহের ক্ষমতা কোনো কারণে কমে গেলে হার্ট ফেইলিউর হয়। দুভাবে হয় হঠাৎ করে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে হৃৎপিণ্ডে বৈকল্য দেখা গেলে বা হৃৎপিণ্ডের সঞ্চালনক্ষমতা কমে গেলে তাকে বলে আকস্মিক হার্ট ফেইলিউর। এ সময়ের মধ্যে রোগীর হঠাৎ খুব শ্বাসকষ্ট হয়। অন্যদিকে দীর্ঘদিন বা কয়েক মাস বা বছরব্যাপী ঘটে দীর্ঘমেয়াদি হার্ট ফেইলিউর। দীর্ঘদিন ধরে রোগী শ্বাসকষ্টে ভোগেন, দিন দিন বাড়ে এর তীব্রতা। সত্তরোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে এ হার ১০ শতাংশের বেশি। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী, যারা শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন, তাদের ছয়জনের একজন হার্ট ফেইলিউরের রোগী।

হৃৎপিণ্ড বৈকল্যের কারণ : একক কোনো রোগ নয়। এটি নানা ধরনের হৃদরোগের একধরনের উপসর্গ। বেশির ভাগ হৃদরোগই নীরব ঘাতক। কোনো উপসর্গ ছাড়াই ধীরে ধীরে এসব রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে থাকে। পরে আকস্মিক বা দীর্ঘমেয়াদি হার্ট ফেইলিউরের মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়।

উপসর্গ : শ্বাসকষ্ট হলো হার্ট ফেইলিউরের প্রধান উপসর্গ। ফুসফুসের রোগসহ অন্য কিছু রোগেরও প্রধান উপসর্গ শ্বাসকষ্ট। তাই শ্বাসকষ্ট হলেই তা হার্ট ফেইলিউরের জন্য কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। অল্প পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপ, চিৎ হয়ে শুলে শ্বাসকষ্ট বা রাতে ঘুমানোর পর শ্বাসকষ্টে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া এগুলো হার্ট ফেইলিউরের লক্ষণ। শুরুতে দ্রুত হাঁটা বা দৌড়ানোর মতো পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট হয়। ধীরে ধীরে কম পরিশ্রম বা অল্প হাঁটলে অথবা নিজের দৈনন্দিন কাজ (যেমন কাপড় পাল্টানো বা গোসল) করতে গেলেও শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে। হাত-পা, পুরো শরীর সব সময় অস্বাভাবিক ঠান্ডা থাকা বা রক্তচাপ অস্বাভাবিক কমে যাওয়াও সন্দেহের বিষয়। অনেকের দুই পা ও পেটে পানি জমে যায়, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। এগুলো ক্রনিক হার্ট ফেইলিউরের লক্ষণ। যদি হঠাৎ প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়, তবে সন্দেহ করতে হবে অ্যাকিউট হার্ট ফেইলিউর। এমন অবস্থায় রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

চিকিৎসা : অ্যাকিউট ও ক্রনিক হার্ট ফেইলিউরের চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন। অ্যাকিউট হার্ট ফেইলিউরের রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। ক্রনিক হার্ট ফেইলিউরের রোগীকে বাড়িতে রেখেই হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধ দেওয়া হয়। হার্ট ফেইলিউরের চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শমতো সারা জীবন ওষুধ চালিয়ে যেতে হয়। ওষুধের পাশাপাশি হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত রোগীর হার্টে সিআরটি নামক যন্ত্র বসানো হয়। এটি ব্যাটারিচালিত একটি ছোট যন্ত্র, যা বুকের উপরিভাগে চামড়ার নিচে স্থাপন করা হয় এবং বিশেষ তারের মাধ্যমে যন্ত্রটি হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে। হার্ট ফেইলিউর রোগীর সব ধরনের চিকিৎসা এখন দেশেই হয়।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, হৃদরোগ বিভাগ

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

চেম্বার : আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড, মিরপুর ঢাকা হটলাইন : ১০৬৭২