রাজবাড়ী জেলায় প্রথম মন্ত্রী জিল্লুল হাকিম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। নতুন মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রীর জন্য প্রথমবারের মত ডাক পেয়েছেন রাজবাড়ী-২ (পাংশা-বালিয়াকান্দি-কালুখালী) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিম।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় মন্ত্রিপরিষদ সভা কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘যারা নতুন মন্ত্রিসভার দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের শপথ গ্রহণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে শপথ নেবেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। নতুন মন্ত্রিসভা ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে গঠিত হবে।’
জিল্লুল হাকিমের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার খবরে রাজবাড়ী ও পাংশা শহরসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তাকে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম পূর্ণমন্ত্রী পেল রাজবাড়ী জেলাবাসী। এরআগে, ২০১৮ সালে দশম জাতীয় সংসদের শেষ সময়ে রাজবাড়ী-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বছর এবং তার পূর্বে বিএনপির আমলে অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন।
জানা গেছে, মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম ১৯৫৪ সালের ২ জানুয়ারি এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (এমএ) পাস করেন। তার বাবা আবুল হোসেন ছিলেন একজন সমাজসেবক এবং শিক্ষানুরাগী। জিল্লুল হাকিমের পৈতৃক বাড়ি পাংশা উপজেলা শহরের নারায়ণপুর গ্রামে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মো. জিল্লুল হাকিম মুক্তিযুদ্ধকালীন গোয়ালন্দ মহকুমা কমান্ডার ছিলেন। তার স্ত্রী সাঈদা হাকিম ও দুই ছেলে মিতুল হাকিম ও রাতুল হাকিম সফল ব্যবসায়ী এবং একমাত্র কন্যা চিকিৎসক।
মো. জিল্লুল হাকিম ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ষষ্ঠবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে প্রথম নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নাসিরুল হক সাবুর কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নাসিরুল হক সাবুকে পরাজিত করে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জিল্লুল হাকিম। ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪১৮ ভোটের ব্যধানে বিশাল বিজয় অর্জন করেন। এ নির্বাচনে তিনি ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৪ ভোট পান। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম সংসদ সদস্যের পাশাপাশি রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তৃতীয়বারের মতো রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর বিশ্বাস বলেন, ‘সংসদ সদস্য হিসেবে জিল্লুল হাকিম এলাকার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এবার পূর্ণমন্ত্রী হওয়ায় এলাকার আরও উন্নয়ন সাধিত হবে। উন্নয়নের গতি আরও বেশি ফিরে পাবে।’
ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী মাস্টার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রাজবাড়ী জেলার জন্য একটি বড় উপহার দিয়েছেন। সেটা এমপি জিল্লুল হাকিমকে একজন পূর্ণমন্ত্রী করেছেন। এতে রাজবাড়ী জেলাবাসী ব্যাপকভাবে খুশি। তার কাছে সকল অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পরে তাকে ফোন করে আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য জানিয়েছেন। নতুন মন্ত্রিসভার তালিকার নাম থাকায় তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।