এমপিকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে পিটুনির শিকার ইউপি চেয়ারম্যান

রাজশাহী ব্যুরো
০৯ জানুয়ারী ২০২৪, ১৩:৩৩
শেয়ার :
এমপিকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে পিটুনির শিকার ইউপি চেয়ারম্যান

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের পুনঃনির্বাচিত এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে পিটুনির শিকার হয়েছেন মাসুদুল গনি নামের এক ইউপি চেয়ারম্যান। 

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে ফারুক চৌধুরী এমপির মালিকানাধীন রাজশাহী মহানগরীর নিউ মার্কেট এলাকার থিম ওমর প্লাজার নীচতলায় তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। 

ঘটনার পর মাসুদুল গনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে নিজের ও পরিবারের জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রাব্বানীর কাঁচি প্রতীকের সমর্থক ছিলেন গোদাগাড়ী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল গনি।  

অভিযোগ মতে, গোদাগাড়ী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল গনি সোমবার রাতে নগরীর থিম ওমর প্লাজায় যান রাজশাহী-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে। রাত ৯টার দিকে ফুল দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় গোদাগাড়ী সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন সেন্টুর নির্দেশে ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ বাবুর নেতৃত্বে ১০/১২ জন ক্যাডার মাসুদুল গনির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। 

ক্যাডাররা ইউপি চেয়ারম্যানকে কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। এ সময় মাসুদুল গনির লোকজন ছুটে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ঘটনার পর চেয়ারম্যান প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। 

ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল গনির অভিযোগ, ‘সন্ত্রাসী পারভেজ বাবুর নেতৃত্বে তার দলবল নিয়ে আমার ওপর আকস্মিকভাবে হামলা করে। সন্ত্রাসীরা তাকে বলে, শালা তুই কাঁচির ভোট করেছিস। এখন এমপিকে ফুল দিতে এসেছিস কেন? দু’এক কথা বলতে বলতে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করে। এ ঘটনায় আমি হতবিহব্বল হয়ে পড়ি। আমাকে মারতে দেখে আমার লোকজন ছুটে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। আমি তাৎক্ষণিক ওমর ফারুক চৌধুরী এমপিকে ঘটনা জানাই।’ 

ইউপি চেয়ারম্যানকে পিটিয়ে আহত করার বিষয়ে জানতে রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফলে এই বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। 

তবে অভিযোগের বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ বাবু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এমপিকে ফুল দিতে যাওয়ার সময় ভিড়ের মধ্যে কে কাকে মেরেছে আমরা জানি না। আমরা চেয়ারম্যানকে মারিনি। ’

এদিকে ভুক্তভোগী গোদাগাড়ী ও তানোর এলাকার কয়েক ব্যক্তি অভিযোগে বলেন, ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন থিম ওমর প্লাজার নীচতলায় এমপি রাজনৈতিক কার্যালয়টি একটি টর্চার সেলে পরিণত হয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর ওমর প্লাজার নিচতলায় এমপি ফারুকের রাজনৈতিক কার্যালয় সংলগ্ন সেফটি ট্যাংকের ভেতর থেকে নয়নাল উদ্দিন (৬২) নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়। 

অভিযোগ রয়েছে, সুরক্ষিত এলাকা ফারুক এমপির রাজনৈতিক কার্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগ কর্মীর লাশ সেফটি ট্যাংকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তোর করতে পারেনি পুলিশ। যদিও ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি দাবি করে আসছেন তিনি এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছু জানেন না।  

এদিকে ২০২২ সালের ৭ জুলাই ওমর প্লাজার রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাজাবাড়ী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে হকি স্টিক দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। যদিও তিনি সে অভিযোগ অস্বীকার করেন। 

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, থিম ওমর প্লাজায় এর আগেও দলীয় নেতাকর্মীদের পেটানোর ঘটনা ঘটেছে। তবে ফারুক চৌধুরী প্রতিটি ঘটনাতে নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।