চ্যালেঞ্জে ১১ হেভিওয়েট
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার শেষ হলেও হেভিওয়েট অনেক প্রার্থীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বাইরে থাকা কোনো কোনো প্রভাবশালী প্রার্থীর অবস্থা নড়বড়ে। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেও তারা জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন না। রাজনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞ ও তরুণ রাজনীতিকরা তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এসব পরিচিত রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে কারও কারও ভোটের সমীকরণ ভালো নয় বলে মাঠের চিত্র বলছে।
জানা গেছে, নৌকার প্রার্থীর বাইরে থাকা হেভিওয়েট কিছু প্রার্থীকে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে কাজ করছেন দায়িত্বশীলরা। এসব প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও কাজ করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কে কে ভোটের সমীকরণ মেলাতে পারবেন তা আগামীকাল রবিবার জানা যাবে।
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে সোনালি আঁশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেনের (ঈগল) পক্ষে দুটি পক্ষ সরব। এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ শমসেরের প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। তবে শমসের মুবিনের জিতে আসা কঠিন হবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে গেছেন। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম
ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার লড়ছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের বিরুদ্ধে। এলাকায় গাজীর শক্ত অবস্থান থাকায় তৈমূরের জয় সহজ নয়। এ ছাড়া এই আসনে তৈমূর ও গোলাম দস্তগীরের শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়া।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর ও ভেড়ামারা) আসনে। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করা কামরুল আরেফিন। আওয়ামী লীগের গুটিকয় নেতা ইনুকে সমর্থন দিলেও তার ভোটের মাঠে জিতে আসা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম এবং আওয়ামী লীগ নেতা ফাইয়াজুল হক রাজু। তৃণমূলের কর্মীদের বড় অংশ এ দুজনের সঙ্গে। ফলে মেননকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে ভোটের মাঠে।
রংপুর-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)। ভোটের মাঠ তেমন নিরুত্তাপ না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ায় গণমাধ্যম ও ভোটারদের নজর কেড়েছেন। অন্য কোনো দলের শক্ত প্রার্থী না থাকায় এই আসনে নির্বাচনের কোনো আমেজ নেই।
কিশোরগঞ্জ-৩ আসন জোটগত সমীকরণে জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে তার পাশে নেই আওয়ামী লীগ। দলের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসিমুল হকের পাশে। চুন্নু অবশ্য তার পোস্টারে নিজেকে ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ প্রার্থী দাবি করে আলোচনায় এসেছেন।
জোটের আরেক শীর্ষস্থানীয় নেতা জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নৌকা প্রতীকে লড়ছেন পিরোজপুর-২ (কাউখালী, ভা-ারিয়া ও নেছারাবাদ) আসনে। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ। আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মী কাজ করছেন মহারাজের পক্ষে। ফলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জয়ে বড় বাধা মহারাজ।
আরও পড়ুন:
গণভবনে ডাক পেলেন আ. লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের গামছা প্রতীকের প্রার্থী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম) ও আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী চার বারের সাংসদ মৃত কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহানের ছেলে অনুপম শাহজাহান জয়। দুই প্রার্থীর কথার লড়াইয়ে মাঠ গরম। তবে দুই প্রার্থীরই জনসমর্থন কাছাকাছি।
নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ছেড়ে বিএনএমে যোগ দেন সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। তাকে বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফরিদপুর-১ আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক এমপি আব্দুর রহমান, আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কৃষক লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলনের বিরুদ্ধে। এ দুজনের ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান থাকায় জাফরের জয় খুবই কঠিন।
রাজশাহী-২ আসনে ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গেও মাঠে নেই আওয়ামী লীগ। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশার পক্ষে মাঠে নেমেছে নেতাকর্মীরা। ফলে নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার বিজয় কঠিন হবে।