ফরিদপুর সদরে নৌকা ও স্বতন্ত্রের প্রেস্টিজ ইস্যু
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের মাঠে দুজনই নবাগত। একজন আওয়ামী লীগের, অন্যজন লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। তাদের একজন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামীম হক। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। অন্যজন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য ও এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি একে আজাদ। তিনি লড়ছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে। ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে এই দুই প্রার্থীর ভোটের লড়াই এখন প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্বাচনের মাঠে এবার ফরিদপুরের রাজনীতিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছেন শামীম হক ও একে আজাদ। ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে নির্বাচনের মাঠে প্রচারে নেমেছেন। জেলার অন্য আসনগুলো থেকে সদর আসনটিতে আলোচনা-সমালোচনা, প্রচার-প্রচারনা, উত্তেজনা- সবই বেশি। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, ক্যাম্প ভাঙচুর,
অফিসে আগুন দেওয়া, কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা নিয়েও থানায় প্রতিদিনই হচ্ছে অভিযোগ। ফলে ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই এ আসনে বাড়ছে উত্তাপ।
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ ছয় প্রার্থীর মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন কেবল শামীম হক ও একে আজাদ। বাকি প্রার্থীদের কোনো প্রচার চোখে পড়েনি।
আরও পড়ুন:
গণভবনে ডাক পেলেন আ. লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগের তুমুল লড়াই হবে। নির্বাচনে যে-ই জিতুক, ভোটের ব্যবধান হবে খুবই সামান্য।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হক দীর্ঘদিন ধরে দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। মাঝে দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। গত বছর তাকে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি একটি এতিমখানা পরিচালনার পাশাপশি বিনামূল্যে সার্জারি ক্যাম্প, চক্ষু ক্যাম্প, নদী ভাঙনকবলিত মানুষের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন কাজে দান করে সুখ্যাতি পেয়েছেন। খেলাধুলার প্রতিও তার বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। একাধারে তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এবং শেখ রাসেল ও আবহানী ক্লাবের সভাপতির দ্বায়িত্বে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হক বলেন, আমার প্রতিপক্ষ যিনি রয়েছেন তিনিও আওয়ামী লীগ করেন; কিন্তু তিনি শেখ হাসিনার মনোনয়নের বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী হওয়ার পর তিনি আমার বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকের অভিযোগ এনে ইসিতে অভিযোগ দিয়ে আমার প্রার্থিতা বাতিল করেছেন; কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে সর্বোচ্চ আদালত থেকে আমি আমার প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছি। তিনি ফের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে রিভিউ করেছেন। তিনি এখন ভোটের মাঠে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছেন। নির্বাচন বানচার করতে তিনি বিএনপির নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দিয়ে চলেছেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার এ মিশন সফল হবে না।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী একে আজাদও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। বিগত দিনে তিনি দলের জেলাসহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এবার তিনি উপদেষ্টা সদস্য হিসেবে রয়েছেন। একজন দানবীর হিসেবে একে আজাদের বেশ পরিচিতি রয়েছে। ফরিদপুরের বহু মানুষকে তিনি তার ফ্যাক্টরিতে চাকরি দিয়েছেন।
একে আজাদ বলেন, আমি ফরিদপুরের মানুষের সেবা করতে চাই। তাই এবারের নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নই। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন সৈনিক এবং নেত্রীর নির্দেশেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমি নির্বাচিত হলে ফরিদপুরে একটি ইকোনমিক জোন গড়ে তুলব। আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী। তবে এসব করে লাভ হবে না। জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে এর জবাব দেবে।