গর্ভবতীর যে পরীক্ষাটি করা একান্ত প্রয়োজন

ডা. সাজেদা রুমানা আহমেদ
২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
গর্ভবতীর যে পরীক্ষাটি করা একান্ত প্রয়োজন

প্রত্যেক মা-বাবাই চান, তার সন্তান সুস্থ ও সবল হয়ে জন্মগ্রহণ করুক। এজন্য তাদের চেষ্টা ও সচেতনতার কোনো কমতিই থাকে না। গর্ভবতী মা সব থেকে বেশি দুশ্চিন্তায় থাকেন তার সন্তানের নড়াচড়া, গঠন ও বেড়ে ওঠা নিয়ে। এজন্য গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ট্রাইমিস্টারে (২হফ ঞৎরসবংঃবৎ) যে আল্ট্রাসনোগ্রাম স্ক্যানটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো- অ্যানোমলি স্ক্যান। এই স্ক্যানের মাধ্যমে সন্তানের গঠনগত কোনো ত্রুটি আছে কিনা, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। একইসঙ্গে সন্তানের শারীরিক বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, তাও দেখা হয়ে থাকে। অ্যানোমলি স্ক্যান করতে মূলত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা থাকলে আরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে।

পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতি : এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। এছাড়া প্রস্রাবের চাপেরও দরকার পড়ে না। তবে গর্ভবতীকে সুতির ঢিলাঢালা পোশাক পরে পরীক্ষাটি করতে হয়।

পরীক্ষার ধরন : অন্যান্য Pregnency profile স্ক্যানের মতোই রোগীকে বেডে শুইয়ে জেল দিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়ে থাকে। যেহেতু সন্তানের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং ছবিগুলো জমা করে রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়ে থাকে, আর সেই একটু বেশি সময় লেগে যেতে পারে।

এই স্ক্যানে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা : X-ray, CT scan পরীক্ষার উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রঞ্জন রশ্মি ব্যবহৃত হয় কিন্তু আল্ট্রাসনোগ্রামে ব্যবহৃত হয়ে থাকে শব্দ তরঙ্গ, যার কোনো ক্ষতিকর দিক এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিগত ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষাটি করা হচ্ছে এবং ১০ কোটিরও বেশি গর্ভবতী মায়ের ওপর পরীক্ষাটি করে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা করে শিশুর ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

এই স্ক্যানের ফলাফল মোটামুটি নির্ভুল হলেও সবসময় শতভাগ নিশ্চিতভাবে শিশুর অস্বাভাবিকতা নির্ণয় করা যায় না। গবেষণায় দেখা গেছে, এই স্ক্যানের মাধ্যমে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে স্পাইনা বাইফিডা, ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্লেফট লিপ বা প্যালেট এবং ৬০-৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে জন্মগত হার্টের সমস্যা নির্ণয় করা সম্ভব। এ ছাড়াও ৫০-৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি সম্পর্কে (জিনগত ত্রুটি) সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।

এই স্ক্যানটি করার জন্য অবশ্যই যে দুটি জিনিস প্রয়োজন তা হলো, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন অত্যাধুনিক মেশিন আর অন্যটি হলো দক্ষ চিকিৎসক। এই দুইয়ের সমন্বয়ে সুন্দরভাবে স্ক্যানটি সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক সন্তানই পাওয়া যায়। দুর্ভাগ্যক্রমে যদি কোনো সমস্যা চিহ্নিত হয়, তা হলে হতাশ না হয়ে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা উচিত।


লেখক : কনসালট্যান্ট সনোলজিস্ট

০১৯১৪৫৪২৩৮৯