আ. লীগ নেতাকে অব্যাহতির ২ ঘণ্টা পর স্বপদে বহাল
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-১ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মতবিনিময় সভায় ‘নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না’ বলা মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলামকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির অব্যাহতি দেওয়ার দুই ঘণ্টা পর স্বপদে বহাল করেছেন সাধারণ সম্পাদক।
গত মঙ্গলবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠির মাধ্যমে সিরাজুল ইসলামকে অব্যাহতি ও বহাল করা হয়।
এবারের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম হীরুর পক্ষে কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুলের পক্ষে কাজ করছেন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম হিরুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামানের সভায় সিরাজুল ইসলাম বলেন, ’নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না’। তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, ও জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এমন অবস্থায় তাকে সাংগঠনিক বিরোধী কার্যক্রমের কারণে মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। তাকে স্থায়ী বহিষ্কার কেন করা হবে না তা আগামী ৭ দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়।
এর কয়েক ঘণ্টা পরই সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী স্বাক্ষরিত আরেক চিঠিতে জানানো হয়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ও সমর্থনের বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনো বিধি নিষেধ নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি। তাই সব নেতাকর্মীর নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও সমর্থন তাদের নিজস্ব অধিকার। এ বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। সিরাজুল ইসলামকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত সভাপতির একক ও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত যা গ্রহণযোগ্য বা কার্যকর নয়। আপনি স্ব-পদে বহাল আছেন।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন। সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য নৌকার হুমকি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য হুমকি। এ জন্য তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কোনো মিটিং না ডেকে কাউকে এককভাবে অব্যাহতি দেওয়ার অধিকার সভাপতির নেই। তিনি আমার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেনি। নেত্রী এবার নির্বাচন সফল করার লক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রার্থী হওয়ার ও তাদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। নেত্রীর সিদ্ধান্ত ছাড়া আমরা কাউকে অব্যাহতি দিতে পারি না।’
এর আগে ৬ ডিসেম্বর দুপুরে মাধবদী পৌরসভা মিলনায়তনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুলের মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা যখন জানবেন মাধবদীর মেয়র মোশারফ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ভাইয়ের জন্য নামছেন, তখন কেউ বাঁধা দিয়ে রাখতে পারবেন না। কাল থেকে নৌকাওয়ালারা পলাইবার জন্য জায়গা পাবে না।’