একই ভঙ্গিতে কত সময় কাজ করা উচিত

ডা. মো. বখতিয়ার
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
একই ভঙ্গিতে কত সময় কাজ করা উচিত

আমরা যারা কর্মজীবী, তাদের বেশির ভাগেরই চেয়ার-টেবিলে কম্পিউটারে বসে কাজ করতে হয়। কাজটি করতে হয় অফিস সময়ের মধ্যেই। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে এমন হয় যে, চেয়ার ছেড়ে ওঠার সময়ই পাওয়া যায় না। অনেকেই বসে নাকে-মুখে দীর্ঘ সময় ধরে চেয়ারে বসে কাজ করে থাকেন। কিন্তু ওই সময়টুকু একই ভঙ্গিতে কত সময় কাজ করা উচিত, এ সম্পর্কে আমাদের বেশিরভাগই মানুষেরই কম জানাশোনা। যারা দীর্ঘসময় অফিসে বসে কাজ করেন তাদের ঘাড়, কোমর, হাঁটু বা কাঁধ ব্যথা হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি বেড়ে যায়। আর এ সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়ে থাকে অফিস সিনড্রোম। দিনের ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা চেয়ার-টেবিল বা কম্পিউটার-মোবাইলের সামনে বসেই বেশিরভাগ সময় কাটে অধিকাংশ কর্মজীবী মানুষের। এর ফলে হাড় ও মাংসপেশিতে এক ধরনের জড়তা তৈরি হয়। পর্যাপ্ত সূর্যের আলো শরীরে না লাগার কারণে ভিটামিন-ডি’র ঘাটতিও দেখা দিয়ে থাকে। আস্তে আস্তে শরীর ক্লান্ত হতে থাকে। মাংসপেশি ও হাড়ের জড়তা প্রকাশ পায় ব্যথার মাধ্যমে। হাড়ের ক্ষয়, মাংসপেশির দুর্বলতাজনিত ব্যথা বয়স চল্লিশ পেরোলেই জেঁকে বসে যায়।

যে কারণে এমন হয় : ভারী কাজ কিংবা বসা, শোয়া সঠিক ভঙ্গিতে না করলেই তাদের ঘাড় ও কোমরে ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হচ্ছে দীর্ঘ সময় একই ভাবে কাজ করলেই ব্যথাজনিত শারীরিক সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অনেকে ভাবেন, ভালো শক্ত কাঠের চেয়ারে বসে কাজ করলে ঘাড় বা কোমরব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। আসলে কিন্তু তা নয় । বিষয়টা হলো, আপনি একই ভঙ্গিতে কতটা সময় কাজ করলেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ভঙ্গি যে কোনো রকম হতে পারে, ব্যথামুক্ত থাকার প্রথম শর্ত হলো, সেই ভঙ্গিতে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না।

প্রতিকার : ব্যথা কমানোর প্রথম কার্যকরী উপায় হলো একভাবে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা যাবে না। প্রতি এক ঘণ্টায় এক মিনিটের জন্য হলেও অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। সুযোগ থাকলে হালকা স্ট্রেচিং করতে হবে। অফিসে বসে খুব সাধারণ অথচ বিশেষ কিছু ব্যায়াম আছে, যা অফিসের চেয়ারে বসেই করা যাবে, সেগুলো করতে হবে। এছাড়া সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাঁটতে হবে। অনেক কর্মজীবী বলেন, হাঁটতে সময় পান না। এক্ষেত্রে কর্মজীবীকে কাজের মধ্যেই সময় বের করে নিতে হবে। অফিস থেকে বাসায় ফিরতে যেটুকু রাস্তা রিকশায় আসেন, সেটুকু আজ থেকে হেঁটে আসুন অথবা সাধের প্রাইভেট কারে অফিসে এলেও যাওয়ার সময় হেঁটেই অফিস থেকে যান। ছুটির দিনটিতে সাঁতার কাটুন, দৌড়ান। শারীরিক শ্রমের সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আলোও শরীরে মাখুন, যাতে ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি দুর হয়। বয়স বৃদ্ধির আগে থেকেই হাড়ের যত্ন নিন। সুস্থ্য থাকুন, ভালো থাকুন।

লেখক : জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খাজা বদরুদদোজা মডার্ন হাসপাতাল

সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর

০১৭৭৬৬০৬২৬২, ০১৬৮৭৮২৫৫৬৫