স্বতন্ত্র বাদশা ফেরায় চিন্তিত এমপি বাদশা
সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। গতকাল সোমবার প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। এতে চিন্তায় পড়েছেন এই আসনে টানা তিনবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হওয়া বর্তমান এমপি ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে টানা চতুর্থবার নির্বাচন করবেন তিনি। তবে এবার তাকে আর ছাড় দিতে চাইছেন না স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ সদর (রাজশাহী-২) আসন। এ আসনটি সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। জোটের কোটায় নিজ দলের প্রতীক হাতুড়ি-কাস্তে ফেলে তিনি শরিক কোটায় এবার চতুর্থবারের মতো নৌকা পেয়েছেন। এতে চরম নাখোশ মহানগর আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, রাজশাহী সদর আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির কোনো ভোটব্যাংক নেই। মূলত বাদশাকেন্দ্রিক কিছু নেতাকর্মী সক্রিয়। অথচ নৌকার টিকিটে বারবার এমপি হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈরিতায় জড়িয়েছেন তিনি। এ কারণে দলীয় মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। তবে আসন ভাগাভাগিতে বাদ পড়েন তিনি।
ওয়ার্কার্স পার্টির বাদশাকে ঠেকাতে স্বতন্ত্র মনোনয়নপত্র তোলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। কিন্তু তিনি বাছাইয়ে বাদ পড়েন। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন অধ্যক্ষ বাদশা। কিন্তু সেখানেও হেরে যান। প্রার্থিতা হারিয়ে তিনি উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেখানেও টেকেনি তার প্রার্থিতা। তবে হাল না ছেড়ে তিনি আপিল বিভাগে ছোটেন তিনি। সেখানে সোমবার শুনানিতে চূড়ান্তভাবে প্রার্থিতা ফিরে পান।
পরে শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে ১৫ বছর ধরে নৌকার প্রতীক নিয়ে এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা। কিন্তু তিনি কোনো উন্নয়ন করেননি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বা জনগণের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তিনি জয়বাংলা স্লোগানও দেন না। আওয়ামী লীগকে ধারণ করেন না। এটি সুবিধাবাদিতা। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতেই মানুষ আমাকে ভোট দেবে।
শফিকুর রহমান বাদশার প্রত্যাবর্তনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এখন দ্বিগুণ চাঙ্গা। তারা ফজলে হোসেন বাদশা ঠেকাতে একাট্টা। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু আমাদের সময়কে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এই দলের নেতাকর্মীরা তো তাকে (এমপি বাদশা) ভোট দিয়ে পাস করিয়েছেন। কিন্তু তিনি সেই মর্যাদা রাখেননি। ভোট এলে আমাদের কাছে ভেড়েন। বাকি সময় আওয়ামী লীগকে তুলাধুনা করেন। কাজেই এবার নেতাকর্মীরা জেনেবুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন’।
শফিকুর রহমান বাদশা নির্বাচনে ফিরে আসায় ফজলে হোসেন বাদশা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। নৌকার মনোনয়ন নিয়ে রাজশাহী ফিরে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেননি। এমনকি প্রতীক বরাদ্দ অনুষ্ঠানেও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নেননি। প্রতীক পেয়ে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। কিন্তু এ সময়ও তার পাশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন:
গণভবনে ডাক পেলেন আ. লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
ফজলে হোসেন বাদশা এমপি আমাদের সময়কে বলেন, ‘১৪ দলের জোটনেত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষরে আমি নৌকার প্রার্থী। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকা ভালো নয়। জাসদেরও প্রার্থী আছে। এগুলো বিচ্ছিন্নভাবে প্রার্থী হচ্ছে। এ নিয়ে আমার বলার কিছু নেই’।
এবারের নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন জাসদ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলীও। তিনি দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে লড়ছেন। শিবলী বলেন, ‘আমি শক্তভাবে ভোটের মাঠে আছি। জনগণ এবার পরিবর্তন চায়। কাজেই জয়ের ব্যাপরে আমি আশাবাদী।’