১০ আসনে নৌকার জয়ে বাধা স্বতন্ত্র আ.লীগ নেতারা
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে জানা গেল, চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১০টিতেই নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ নেতা। দুটি আসনে শরিকদের নিয়ে দ্বন্দ্ব অব্যাহত আছে। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হলে এ ১২ আসন নিয়ে কঠিন লড়াইয়ে নামতে হবে নৌকার প্রার্থীদের। চট্টগ্রামের ১৬টি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের ১৬ জনের বাইরে ১৩টি আসনে ২৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ৮৯ জন প্রার্থীকে এড়িয়ে তারাই আলোচনায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবার মনোনয়নপত্র নেননি। তিনি নিজ পুত্র মাহবুব রহমান রুহেলকে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছেন। তবে রুহেলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমেছেন মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. গিয়াস উদ্দিন। রুহেল হেভিওয়েট প্রার্থী নন বলে ঘোষণা করেছেন গিয়াস। এ আসনে ৮ জন প্রার্থী থাকলেও মূল আলোচনা রুহেল আর গিয়াসকে নিয়েই।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন খদিজাতুল আনোয়ার সনি। তিনি এর আগে সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য ছিলেন। তার বাবা প্রয়াত রফিকুল আনোয়ারও দুই দফা সংসদ সদস্য ছিলেন। কিন্তু গত তিনবার এ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। এবার জোটের প্রার্থী হিসেবে তার পাশাপাশি সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারির নামও আসছে। এ আসন শরিকদের থাকবে নাকি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাবে সে বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত জানতে অপেক্ষা করতে হবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা। এ আসনে নৌকা মার্কার সাবেক প্রার্থী স্বাচিপ নেতা ডা. জামাল উদ্দিন এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নেমেছেন। ১০ জন প্রার্থী থাকলেও মূলত এই দুজনের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে। চট্টগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন। আগের দুবারের এমপি দিদারুল আলম মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে ৯ জন প্রার্থী হলেও মামুনের সঙ্গে দিদারুলেরই লড়াই হবে বলে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনটি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভিমান আর ক্ষোভের শেষ নেই। এ আসনে গত তিনবার সংসদ সদস্য হয়েছেন জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এরশাদ শাসনামলে তিনি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই থেকে আনিসের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব, যা কখনো কখনো কর্মীদের সংঘাতে পরিণত হয়েছিল। এবার এ আসনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম। এ দুজন ছাড়াও প্রার্থী আছেন আরও ৮ জন।
আরও পড়ুন:
গণভবনে ডাক পেলেন আ. লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে এবিএম ফজলে করিমের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো করে কেউই মাঠে নেই। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। এখানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ একজন শক্তিশালী প্রার্থী, যদিও ছোট বিভিন্ন দলের আরও পাঁচজন প্রার্থী আছেন। কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।
চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস মিলছে। এ আসনে নৌকার প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ মাঠের নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামও একজন শক্তিশালী প্রার্থী। আবার বোয়ালখালীর বাসিন্দা ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদের সুজনও এলাকায় জনপ্রিয়।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে এবারও শক্তিশালী প্রার্থী আওয়ামী লীগের মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি ছাড়া আরও ৬ প্রার্থী আছেন চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত আসনটিতে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনে ছয় মাস আগে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু। তিনি এবারও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। উপনির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। এবার এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। এতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে এমএ লতিফ চতুর্থবারের মতো নৌকা পেয়েছেন। কিন্তু ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল হক সুমন এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ওই আসনের ১০ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সভা ডেকে সুমনকে সমর্থন জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, আমরা নৌকার বিপক্ষে নই, ব্যক্তির বিপক্ষে।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। এখানে আগের তিনবারের সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ফলে লড়াই জমে ওঠার আভাস মিলছে পটিয়াতেও।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদই শক্তিশালী প্রার্থী। চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার। এখানে মোট প্রার্থী ৮ জন। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর সঙ্গে লড়ছেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব। মোট ৯ জন প্রার্থী হলেও অন্যদের সেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসার সম্ভাবনা কম।
আরও পড়ুন:
জোটের ভাগে অনেক নেতা নৌকা হারাবেন
চট্টগ্রাম-১৬ আসনে নৌকার মাঝি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান ও অপর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন। এ আসনে সব মিলিয়ে প্রার্থীর সংখ্যা ১৩।