কর্তব্যের প্রতি সচেতন হতে হবে

মুহাম্মদ সালমান শফী
২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৩
শেয়ার :
কর্তব্যের প্রতি সচেতন হতে হবে

বিবাহবিচ্ছেদ শুধু একটি পরিবারকে ধ্বংস করে না, বরং এর প্রভাব পড়ে সন্তান ও সমাজের ওপর। তা ছাড়া বিবাহবিচ্ছেদের পর নারীদের অনেক বিপাকে পড়তে হয়। ইসলাম পরিবারব্যবস্থা দিয়েছে মানুষের সুখ-শান্তির জন্য। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তাঁর (আল্লাহর) অন্যতম একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি লাভ করো।’ (সুরা রুম : ২১)

দাম্পত্যজীবনে সুখ পেতে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেককে আপন কর্তব্যের প্রতি সচেতন হতে হবে। স্বামী হলেন তার স্ত্রীর দায়িত্বশীল। তাকে এই দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি স্ত্রীর প্রতি সহনশীল ও সদাচরণ করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে সদ্ভাবে জীবন যাপন করো।’ (সুরা আন নিসা : ১৯)

নারীদের প্রতি কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ না করার আহ্বান করে নবীজি (স.) সতর্ক করে বলেন, ‘তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।’ (সহিহ মুসলিম : ১২১৮)

অনেক পুরুষ বাইরে সদ্ব্যবহারকারী, কিন্তু পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী এবং বদমেজাজি। অথচ নবী কারিম (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ পুরুষ সে, যে তার পরিবারের কাছে শ্রেষ্ঠ।’ (জামে তিরমিজি : ১১৬২)

ইসলামে বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি থাকলেও তা থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় হালাল হচ্ছে তালাক (বিবাহবিচ্ছেদ)।’ (ইবনে মাজাহ : ২০১৮)

বিবাহবিচ্ছেদ এড়াতে ইসলাম প্রথম থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে এবং পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে কিছু নিয়মনীতিসহ বিয়ের ক্ষেত্রে দিয়েছে বিধিনিষেধ। তাই প্রথমেই আমাদের তা অনুসরণ করতে হবে। অতঃপর দাম্পত্যজীবনে ধর্মীয় বিধিমালা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যদি কখনও নিজেদের মাঝে মনোমালিন্য দেখা দেয় তাহলে আপস-নিষ্পত্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি কোনো নারী তার স্বামী থেকে দুর্ব্যবহার বা উপেক্ষার আশঙ্কা করে তবে পরস্পরে মীমাংসা করে নিলে তাদের কোনো গুনাহ নেই এবং মীমাংসাই উত্তম (বিবাহবিচ্ছেদ থেকে)।’ (সুরা নিসা : ১২৮)

স্বামী-স্ত্রীর সমস্যা সমাধানের জন্য ধাপে ধাপে এগোতে বলা হয়েছে। প্রথমে স্বামী তাকে উপদেশ দেবেন, বোঝানোর চেষ্টা করবেন। তাতে কাজ না হলে শয্যা ত্যাগ করবেন, তার পরও যদি কাজ না হয় তাহলে স্ত্রীর অন্যায় হলে স্বামী তাকে শাসন করবেন। এর পরও যদি সমাধান না হয় এবং উভয়ের মাঝে বিচ্ছেদের আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে উভয় পরিবারের অভিভাবকরা একত্র হয়ে তাদের মধ্যে মীমাংসা করার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কা করো তাহলে (তাদের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য) স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করো। তারা দুজন যদি মীমাংসা চায় তবে আল্লাহ তাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে দেবেন।’ (সুরা আন নিসা : ৩৫)

যদি কোনোভাবেই মীমাংসা করা সম্ভব না হয়, নিরুপায় হয়ে পড়লে তখন ইসলাম বিচ্ছেদের অনুমতি দিয়েছে। তবে একসঙ্গে তিন তালাক নয়; বরং এক তালাক দেবে। এতে পরবর্তী সময়ে যদি তারা কখনও আবার সংসার করতে চায়, তাহলে নতুনভাবে বিয়ে করে পুনরায় সংসার করার সুযোগ থাকবে। অনেকে রাগবশত অজ্ঞতার কারণে স্ত্রীকে একসঙ্গে তিন তালাক দিয়ে বসে। পরবর্তী সময়ে সে অনুতপ্ত হয়ে আবার একসঙ্গে সংসার করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। অথচ ইসলামে তিন তালাক দেওয়ার পর সেই সুযোগ আর থাকে না। যৌক্তিক কারণ ছাড়া বিবাহবিচ্ছেদ ঘটালে নিঃসন্দেহে সেটা জুলুম। আর জুলুমের শাস্তি খুবই ভয়াবহ। আর যদি কোনো নারী যৌক্তিক কারণ ছাড়া স্বামীর কাছে তালাক চায় তাহলে নবীজি (স.) বলেছেন, ‘তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণ হারাম।’ (জামে তিরমিজি : ১১৮৭)

বিবাহবিচ্ছেদ থেকে উত্তরণের সবচেয়ে বড় সমাধান হলো ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা।

মুহাম্মদ সালমান শফী : ইমাম ও খতিব, দারোগা আমীর উদ্দিন ঘাট জামে মসজিদ, বাবুবাজার, ঢাকা