যুক্তরাজ্যে বিশ্বের প্রথমবারের মতো ‘কুকুর ইউনিট’ চালু
যুক্তরাজ্যের সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেশটি বিশ্বের প্রথম প্রশিক্ষিত কুকুর ইউনিট চালু করেছে, যারা প্রাণঘাতী ফেন্টানিল ও নাইটাজিনস (Nitazenes) শনাক্তে সক্ষম। এই ইউনিটের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সীমান্তে সিন্থেটিক ওপিওইড সনাক্তকরণে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
বর্ডার ফোর্স জানিয়েছে, ‘কেই-নাইন সিন্থেটিক ওপিওইড ডিটেকশন ইউনিট’ ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। এই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলো ডাকযোগে পাঠানো পার্সেল, মালামাল, কার্গো ও কুরিয়ার চালানে লুকানো মাদক শনাক্তে সহায়তা করছে।
জানা গেছে, অপরাধচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান সিন্থেটিক ওপিওইড ব্যবসা যুক্তরাজ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা আসক্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে।
সরকার বলছে, এই বিশেষ উদ্যোগের ফলে অপরাধচক্রের জন্য মাদকপাচার গোপন রাখা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
পুলিশিং বিষয়ক মন্ত্রী সারা জোন্স বলেন, ‘মাদক মানুষকে হত্যা করে। আর যারা এই মৃত্যু-ব্যবসা চালায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের এক ধাপ এগিয়ে থাকতে হবে। বিশেষ প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করে আমরা সিন্থেটিক ওপিওইড পাচারকারীদের থামাতে পারব। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এখন এমন এক মাদকবাজারের বিরুদ্ধে লড়ছি যা দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং সংগঠিত অপরাধচক্রের হাতে নিয়ন্ত্রিত।’
আরও পড়ুন:
২৪ দিনে রেমিট্যান্স এল ১৪৯ কোটি ডলার
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের বার্তা স্পষ্ট, এসব বিপজ্জনক মাদক যাতে কখনোই আমাদের সমাজে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা লড়াই আরও জোরদার করছি।’
মারাত্মক ঝুঁকি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিশেষজ্ঞদের মতে, নাইটাজিনস হেরোইনের চেয়ে ৫০ থেকে ৫০০ গুণ বেশি শক্তিশালী। শুধুমাত্র ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে এই মাদকের সঙ্গে সম্পর্কিত ৭৫০টিরও বেশি মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।
সিন্থেটিক ওপিওইডের অতি সামান্য পরিমাণও প্রাণঘাতী হতে পারে। মাদক পাচারকারীরা নতুন উৎপাদন কৌশল ও পরিবর্তিত গন্ধ ব্যবহার করে শনাক্তকরণ এড়িয়ে যাচ্ছিল।
তাই বর্ডার ফোর্স এই প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণকে ক্রমাগত হালনাগাদ করবে বলে জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মাসে অনুষ্ঠিত ফাইভ কান্ট্রি মিনিস্টেরিয়াল সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে সিন্থেটিক মাদক শনাক্তকরণে সহযোগিতা বৃদ্ধির চুক্তি করেন। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য তৈরি করেছে ‘সিন্থেটিক ওপিওইড পিল ক্যাটালগ’, যেখানে বিভিন্ন দেশে জব্দ করা সিন্থেটিক মাদকের নমুনা সংরক্ষিত থাকবে। সীমান্ত কর্মকর্তারা এই ডাটাবেস ব্যবহার করে সন্দেহজনক ট্যাবলেট দ্রুত যাচাই করতে পারবেন।
সরকারের নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে এই উদ্যোগের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি ২২টি নতুন সিন্থেটিক মাদক নিষিদ্ধ করেছে, এবং নাইটাজিনসকে আইনের আওতায় আনতে ‘জেনেরিক সংজ্ঞা’ যুক্ত করেছে, যাতে অপরাধচক্র আইন এড়িয়ে যেতে না পারে।
এছাড়া জরুরি পরিস্থিতিতে প্রাণ বাঁচাতে ব্যবহৃত নালোক্সন ওষুধ এখন পর্যন্ত ৩২টি পুলিশ ফোর্সে সরবরাহ করা হয়েছে এবং আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা চলছে।
পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বে প্রথমবারের মতো সিন্থেটিক ওপিওইড শনাক্তে প্রশিক্ষিত কুকুর ইউনিট মোতায়েনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য মাদকবিরোধী লড়াইয়ে এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করল। এই উদ্যোগ সীমান্তে মাদক প্রবেশের পথ রুদ্ধ করবে এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে যুক্তরাজ্য সরকার মনে করে।
আমাদের সময়/আরআর