দোয়া না করার ক্ষতি
দোয়া কবুলের জন্য পাপাচার থেকে বিরত থাকা, আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট না করা, আল্লাহর সঙ্গে শিরক না করার নির্দেশনা দিয়েছেন হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পাশাপাশি হারাম থেকেও বেঁচে থাকার কথা রাসুল (সা.) বলেছেন। রাসুল (সা.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত অবিন্যস্ত ও ধুলোয় মলিন। সে আসমানের দিকে হাত প্রশস্ত করে বলে (দোয়া করে) হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এমন অবস্থায় তার দোয়া কীভাবে কবুল হতে পারে? -জামে তিরমিজি
হালাল জীবন-জীবিকা ছাড়া দোয়া কবুল করা হবে না আর সামষ্টিক জীবনে মানুষ যদি আমর বিন মারুফ নাহি আনিল মুনকার তথা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান না করে তাহলে এমন সময় আসবে তখন বান্দাদের ডাকে আল্লাহ সাড়া দেবেন না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শপথ সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ থেকে বাধা প্রদান করবে। নতুবা অচিরেই এর ফলে আল্লাহ তোমাদের ওপর শাস্তি পাঠাবেন। এরপর তোমার কাছে দোয়া করবে কিন্তু তোমাদের দোয়ায় সাড়া দেওয়া হবে না। -জামে তিরমিজি
আলেমরা বলেন, দোয়া কবুলের জন্য অন্তরের গভীর থেকে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে, মনের আকুতি মিশিয়ে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে মানুষরা! তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে তখন কবুল হওয়ার দৃঢ়বিশ্বাস নিয়ে চাইবে, কারণ কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দোয়া করলে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন না। -সহিহ তারগিব
একনিষ্ঠভাবে সচেতনভাবে কল্যাণ কামনায় দোয়া চাইতে হবে। ক্ষতিকর বিষয়ে দোয়া চাইলে তা হবে হিতে বিপরীত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন তোমাদের কেউ যখন কোনো কিছু কামনা করবে তখন সে কী চাচ্ছে তা যেন ভালো করে দেখে; কারণ তার কোনো বাসনা বা প্রার্থনা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যাচ্ছে তা সে জানে না। -মাজমাউয যাওয়াইদ
আরও পড়ুন:
কোন সময় দোয়া করলে বেশি কবুল হয়?
হজরত উম্মে সালামা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা নিজেদের ওপর কখনও ভালো ছাড়া খারাপ দোয়া করবে না। কারণ ফেরেশতারা তোমাদের দোয়ার সঙ্গে আমিন, আমিন বলেন। -সহিহ মুসলিম
অনেক সময় মানুষ নানাবিধ দুঃখ-কষ্ট, যাতনায় কিংবা অন্য কোনো কারণে অতিষ্ঠ হয়ে সন্তান-সন্ততি এমনকি নিজের মাল-সম্পদেরও ক্ষতি কামনা করে। এটা কাম্য নয়, এ প্রসঙ্গে হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা কখনও নিজেদের বা তোমাদের সন্তানদের বা তোমাদের মানসম্মানের অমঙ্গল বা ক্ষতি চেয়ে বদদোয়া করবে না। কারণ হয়তো এমন হতে পারে, যে সময় তোমরা বদদোয়া করলে সে সময়টি এমন সময় যখন আল্লাহ বান্দার সব প্রার্থনা কবুল করেন এবং যে যা চায় তাকে তা প্রদান করেন। এভাবে তখন তোমাদের বদদোয়াও তিনি কবুল করে নেবেন। -সহিহ মুসলিম
মানুষের মধ্যে এমনও ব্যতিক্রম কেউ কেউ আছেন আল্লাহর কাছে দোয়াই চান না। কেউ আছেন অন্যায়-জুলুমের শিকার হলে, ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বিপদ-আপদ-মুসিবতে পতিত হলে আল্লাহর কাছে দোয়া করা প্রয়োজন মনে করেন না। তারা ধারণা করেন আল্লাহ তো তার সবকিছুই দেখছেন, শুনছেন, তিনিই নিশ্চয়ই মুক্তি দেবেন কিংবা উদ্ধার করবেন- দোয়া চাওয়ার প্রয়োজন কী। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সবচেয়ে অক্ষম সে ব্যক্তি যে দোয়া করতেও অক্ষম। -জামিউস সাজির
আরও পড়ুন:
হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ল ২১ দিন
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত অপর হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না আল্লাহ তার ওপর ক্রোধান্বিত হন। -জামে তিরমিজি
তাই আসুন, আমরা অসীম দয়ার সাগর আল্লাহর কাছেই একনিষ্ঠভাবে আমাদের সব চাওয়া বেশি বেশি করে পেশ করি। পাপমোচনের জন্য প্রার্থনা করি। প্রয়োজন পূরণে প্রার্থনা করি। বিপদ-আপদ মুসিবত থেকে উদ্ধারের জন্য নিবেদন করি। সুস্থতা কামনায় মোনাজাত করি। স্ত্রী-সন্তান, পিতা-মাতা, পরিবার-পরিজন, জীবিত-মৃত মুমিন মুসলমানদের জন্য দোয়া করি। সমৃদ্ধি ও কল্যাণের জন্য দোয়া চাই। দোয়া, মোনাজাতে আকুতি-মিনতি ও ক্রন্দনের মাধ্যমে হৃদয়কে পবিত্র করি। দূরে সরে যাওয়া সত্তাটাকে আল্লাহর আরও বেশি নৈকট্য, সন্তুষ্টি এবং রহম লাভের উপযুক্ত করি। আল্লাহ সবাইকে বেশি বেশি দোয়া করার তওফিক দান করুন। আমিন।
আরও পড়ুন:
চাঁদ দেখা কমিটির সভা কাল
মুহাম্মদ সালমান শফী : ইমাম ও খতিব, দারোগা আমীর উদ্দিন ঘাট জামে মসজিদ, বাবুবাজার, ঢাকা