জবিছাত্র জোবায়েদ হত্যা মামলায় বর্ষার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসাইন হত্যা মামলায় ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আদালতে বর্ষার জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী মাহমুদুল হাসান শহীদ।
তিনি শুনানিতে বলেন, আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। পুলিশ অহেতুক হয়রানি করার জন্য গত ২১ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করে। আসামির বিরুদ্ধে এজাহারে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। আসামি একজন কোমলমতি শিক্ষার্থী এবং কিশোরী। তাই আসামি জামিন পেতে পারেন।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা চৌধুরী সুমন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, তিনি হত্যা মামলার আসামি। নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন। তাকে জামিন দেওয়ার কোনো কারণ নেই। জামিন পেলে পলাতক হবেন। তার জামিনের ঘোর বিরোধিতা করছি। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামি বর্ষার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ২১ অক্টোবর বর্ষাসহ তিন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন।
আরও পড়ুন:
ভারত সফরে গেলেন প্রধান বিচারপতি
অপর আসামিরা হলেন বর্ষার প্রেমিক মো. মাহির রহমান ও মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান।
মামলায় প্রীতম নামে আরেকজন সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি রেকডের আবেদনে বলা হয়, আসামি মো. মাহির রহমানের সঙ্গে আসামি বার্জিস শাবনাম বর্ষার দেড় বছর থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ভুক্তভোগী মো. জোবায়েদ হোসেন বার্জিস শাবনাম বর্ষাকে প্রায় এক বছর থেকে টিউশন করান। এরই একপর্যায়ে শিক্ষকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এতে করে মাহির ও বর্ষার মধ্যে ঝগড়া বিবাদ তৈরি হয়।
ঘটনার একমাস আগে আসামি মাহির জানতে পারে জোবায়েদের সঙ্গে বর্ষার প্রেমের সম্পর্ক আছে। বিষয়টি মাহির মেনে নিতে পারে না এবং বর্ষাও মাহিরকে বলে, ‘স্যারকে তুমি মেরে ফেল, আমি আর স্যারকে সহ্য করতে পারছি না।’উক্ত বিষয়ে মাহির ও বর্ষা জোবায়েদকে হত্যা করার জন্য একাধিক পরিকল্পনা করেন। জোবায়েদ বাসায় কখন পড়াতে আসে এবং কখন চলে যায় নিয়মিত বর্ষা মাহিরকে জানায়।
মাহির তার বন্ধু আয়লানের সঙ্গে হত্যার পরিকল্পনা করে আগানগর, বউ বাজার, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এলাকা থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে একটি সুইজ গিয়ার চাকু কেনেন। গত ১৯ অক্টোবর বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের ১৫ তম ব্যাচের ছাত্র মো. জোবায়েদ হোসেন বংশাল থানাধীন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডস্থ নুর বক্স লেন এর ১৫নং হোল্ডিং রৌশান ভিলায় টিউশন করাতে যান।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি বার্জিস শাবনাম বর্ষাকে টিউশন করাতে গিয়ে বাসার নিচতলার সিঁড়ির নিচে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা বার্জিস শাবনাম বর্ষার সাবেক প্রেমিক মো. মাহির রহমান ও তার বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান একই তারিখ বিকাল ১৬.৩০ ঘটিকার সময় বাসার নিচে মো. জোবায়েদ হোসেন পৌছালে মাহির মো. জোবায়েদ হোসেনকে জিজ্ঞাসা করে আপনি বর্ষার সঙ্গে সম্পর্ক করেন কেন? এতে কথা কাটাকাটি শুরু হলে মাহিরের ব্যাগে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু বাহির করে গলার ডান পাশে আঘাত করে খুন করে। এসময় আসামি বর্ষা তিন তলায় দাঁড়িয়ে ছিল। আসামি মালার ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে প্রত্যক্ষভাবে সাক্ষ্য প্রমাণ ও সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। আসামিকে গ্রেপ্তারে পর সূত্রে বর্ণিত মামলা সংক্রান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বর্ণিত আসামি মামলার ঘটনার বিষয়ে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার পূর্বক জবানবন্দি প্রদান করতে ইচ্ছুক।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, মো. জোবায়েদ হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করাতেন। প্রতিদিনের মতো তিনি ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বংশাল থানাধীন ৩১নং ওয়ার্ডে নুর বক্স লেনের ১৫ নম্বর হোল্ডিং রৌশান ভিলায় পড়ানোর জন্য যান। একই তারিখে সন্ধ্যা প্রায় ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ওই ছাত্রী জোবায়েদ হোসাইনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই সৈকতকে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে জানান, ‘জোবায়েদ স্যার খুন হয়ে গেছে, কে বা কারা জোবায়েদ স্যারকে খুন করে ফেলছে।’
এ বিষয়টি ওইদিন রাত আনুমানিক ৭টার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. কামরুল হাসান ভুক্তভোগী জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান। পরে এনায়েত তার শ্যালক শরীফ মোহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থল রৌশান ভিলায় পৌঁছান। ওই ভবনের নিচতলা থেকে ওপরে ওঠার সময় তিনি সিঁড়ি এবং দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পান। ওই ভবনের ৩য় তলার রুমের পূর্ব পার্শ্বে সিঁড়িতে গেলে সিঁড়ির ওপর জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উপুড় অবস্থায় দেখতে পান।
এ অভিযোগে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বাদী হয়ে রাজধানীর বংশাল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আমাদের সময়/জেআই