যুবলীগ নেতা সম্রাট ও তার সহযোগীর জামিন বাতিল, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

আদালত প্রতিবেদক
২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:২১
শেয়ার :
যুবলীগ নেতা সম্রাট ও তার সহযোগীর জামিন বাতিল, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

‎১৯৫ কোটি টাকা পাচারের মামলায় ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এবং তার সহযোগী এনামুল হক আরমানের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

রোববার (২৬ অক্টোবর) ঢাকার মেট্টোপলিটন মাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামান এ আদেশ দিয়েছেন। ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

‎এর আগে এ মামলায় বৃহস্পতিবার আসামি সম্রাটের পক্ষে আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ পারভীন (হীরা) ২০৫ ধারায় হাজিরা প্রদান করেন । তবে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবীর মাধ্যমের এই হাজিরা বাতিলের আবেদন করা হয়।

‎‎বিচারক আসামিপক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, সম্রাট কোথায় আছেন? জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘সম্রাট কোথায় আছেন, তা তার জানা নেই।’ এরপর বিচারক রোববার সম্রাটকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন।

‎কিন্তু আদেশ অনুযায়ী এদিন সম্রাটকে আদালতে হাজির করতে না পেরে আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ পারভীন সময় চেয়ে আবেদন করেন। তিনি আবেদনে বলেন, ‘আসামি জামিনের অপব্যবহার করেননি। শারীরিক জটিলতা হার্ট, কিডনি নষ্ট, ওপেন হার্ট সার্জারি করানোর কারণে ২০৫ ধারায় আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়। শারীরিক অসুস্থতার জটিলতার কারণে তিনি বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকায় হাজির হতে পারেননি। সুস্থ হয়ে আদালতে হাজির হবেন।’ তবে আরমানের পক্ষে কোনো পদক্ষেপ ছিল না।

‎‎এরপর প্রসিকিউটর ফারুকী বলেন, ‘সম্রাট জামিনে থেকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত হয়েছেন। দেশবিরোধী কাজ করছেন। তিনি আদালতের অনুমতি না দিয়েই দেশের বাইরে চলে গেছেন। তার ব্যক্তিগত হাজিরা মওকুফ করে, জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রার্থনা করছি।’

আরমান জামিনে থেকে একাধিকবার আদালতে উপস্থিত হননি। এজন্য তার জামিনও বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রার্থনা করেন তিনি। ‎পরে ‎শুনানি শেষে আদালত আসামিদের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

‎উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে ১৯৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের এসআই রাশেদুর রহমান।

‎মামলায় অভিযোগ করা হয়, সম্রাট রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টন, কাকরাইল এলাকায় অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করে আনুমানিক ১৯৫ কোটি টাকা এনামুল হক আরমানের সহায়তায় সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন।

আসামিদের বিদেশে যাওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করে মামলায় বলা হয়, সম্রাট ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ৩৫ বার, মালয়েশিয়ায় তিনবার, দুবাইয়ে দুইবার এবং একবার হংকং ভ্রমণ করেছেন। একই সময়ে আরমান ২৩ বার সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেন। ‎২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র‍্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।

‎এরপর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। ‎প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র‍্যাবের পক্ষ থেকে।

‎ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়। ‎রমনা থানার অস্ত্র মামলায় ওই বছর ৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক। ‎আর অর্থ পাচারের মামলা হয় ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। গত ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলায় সম্রাট ও সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে র‍্যাব।

‎সম্রাটকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া ছয় মাসের সাজা অনেক আগেই শেষ হয়েছিল। এর মধ্যে অস্ত্র ও অর্থ পাচারের দুই মামলায় ২০২২ সালের গত ১০ এপ্রিল এবং মাদক মামলায় ১১ এপ্রিল সম্রাটকে জামিন দেয় আদালত। ‎সবশেষে অবৈধ সম্পদের মামলায় সম্রাটের জামিন মঞ্জুর হলে ১১ মে তিনি মুক্তি পান।

আমাদের সময়/আরডি