মিডিয়া ম্যানেজার পেশা হিসেবে

শামস্ বিশ্বাস
০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:২৪
শেয়ার :
মিডিয়া ম্যানেজার পেশা হিসেবে

প্রায় সংবাদপত্রে কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মিডিয়া ম্যানেজারদের কথা বলতে দেখা যায়। কারণ, মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি বহুমাত্রায় বহু ক্ষেত্রে আজ ব্যাপক হারে বিস্তৃত; সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, রেডিও, টিভি আবার ডিজিটাল মিডিয়া, যেমন- সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। এখন অনভিজ্ঞ কিংবা আনাড়ি ব্যক্তির পক্ষে পার্টটাইমভাবে এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। তাই প্রয়োজন ডেডিকেটেড পারসন। এ জন্য এই প্রচারের যুগে প্রচার পাওয়ার জন্য সবাই মিডিয়া ম্যানেজারদের দ্বারস্থ হন।

প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সামাজিক ভাবমূর্তি গড়ে তোলেন মিডিয়া ম্যানেজাররা। প্রতিষ্ঠানটির কাক্সিক্ষত মানুষদের কাছে নানা খবর আকর্ষণীয়ভাবে পৌঁছানো, প্রতিষ্ঠানের সুনাম, ভাবমূর্তি গড়ে তোলা ও ধরে রাখা, গ্রাহকদের সমস্যা সমাধান- এ সবই সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের কাজ।

দায়িত্ব : প্রধানত তিন ধরনের কাজ মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী একক ব্যক্তি বা টিম কাজ করে থাকে।

মিডিয়া প্ল্যানার : মার্ক টোয়েন বহুদিন আগে বলেছিলেন, বহু ছোট জিনিস বড় করে তোলা যায় শুধু বিজ্ঞাপনের দ্বারা। বিজ্ঞাপন দ্বারা মানুষকে বিভিন্ন বার্তা দেওয়া যায়। বিজ্ঞাপন দ্বারা কোনো শিল্পজাত দ্রব্য, বাণিজ্যিক পণ্য বা কোনো সামাজিক বিষয়কে জনসাধারণের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়। যে কোনো সংস্থার ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন লক্ষ্য অর্জনের একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। মিডিয়া প্ল্যানার বিজ্ঞাপনের জন্য প্রয়োজনীয় স্পেস বা জায়গা সংগ্রহ করেন। কীভাবে কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে সেটা মিডিয়া প্ল্যানারের কাজ।

মিডিয়া স্ট্র্যাটেজিস্ট : কৌশল নির্ধারণ না থাকলে লক্ষ্য অর্জনটা ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মিডিয়া স্ট্র্যাটেজিস্ট মিডিয়ায় প্রচারপদ্ধতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করেন, যাতে কোম্পানির বা সংস্থার পণ্য বিক্রয় বা তথ্য, সংবাদ বা সচেতনতা প্রসার ও প্রচার সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। কোনো তথ্য যদি জনগণের কাছে প্রচার করতে হয়, সেটিও এই স্ট্র্যাটেজিস্টরা পরিকল্পনা করেন। প্রচারের গতিপ্রকৃতি কী রকম হবে, সেটা ঠিক করাও এদের কাজ। অর্থাৎ রণকৌশল নির্ধারণ করেন মিডিয়া স্ট্র্যাটেজিস্ট।

মিডিয়া ম্যানেজার : ম্যানেজার যা করেন তাই ম্যানেজমেন্ট। মিডিয়া ম্যানেজারদের কাজ প্রচারসংক্রান্ত পুরো কাজটির তদারকি করা। বলা বাহুল্য, এই তদাকরি প্রচারের লক্ষ্য অনুযায়ী করতে হবে। আমি কাদের কাছে পৌঁছাতে চাই, কীভাবে পৌঁছানো যায়, প্রকৃতভাবে যাদের কাছে পৌঁছাতে চাওয়া হচ্ছে, তা পৌঁছাচ্ছে কিনা, এই বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করা এবং সে অনুযায়ী প্রচারপদ্ধতিতে সংশোধনী আনা, সবই মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট। কোনো ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ডটি যাতে লোকের মনে থাকে দীর্ঘদিন ধরে, তার জন্য অনুরূপ ও উপযুক্ত ক্ষেত্র এবং স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল বের করাÑ এর জন্য জানা দরকার মিডিয়া সংক্রান্ত প্রযুক্তি, বাজারের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা, ভোক্তার রুচি, আয় প্রভৃতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান। কী ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে, সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে মোকাবিলায় কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হবে- এই পুরো কাজ মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট দেখভাল করে।

প্রস্তুতি : মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের বিশেষত মার্কেটিং, পাবলিক রিলেশন বা অ্যাডভার্টাইজিংয়ে ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। মিডিয়ার মৌলিক বিষয়গুলোর খুঁটিনাটি জানতে হবে। প্রেজেন্টেশনের স্মার্ট কৌশল রপ্ত করা। দেশ-বিদেশের কোনো জায়গায় কাজ করার মতো মানসিকতা তৈরি করতে হবে। বিশ্বায়নের এ যুগে কমিউনিকেশন স্কিল ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ছাড়া টিকে থাকা যাবে না। তাই যারা এই পেশায় কাজ করতে আগ্রহী তাদের উচিত শিক্ষাজীবনেই ইংরেজি ভাষায় ভালো দখল আনা। কম্পিউটার স্কিল, প্রেজেন্টেশন স্কিল, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এসবে দখল বাড়ানো।

আয়-রোজগার : এই পেশায় আয়-রোজগারের সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে মিডিয়ায় হাইলাইটেড হওয়ার গ্ল্যামার, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির মুখপাত্র হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। সাধারণত স্টার্টিং স্যালারি ১৫-২০ হাজারের মধ্যে হয়ে থাকে। অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার ওপর নির্ভর করে বেতন-ভাতার অঙ্ক। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানভেদে থাকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।