খাওয়ার শুরুতে লবণ মুখে দেওয়া কি সুন্নত?
ইসলামি জীবনব্যবস্থায় সুন্নতের অনুসরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোনো কাজকে সুন্নত হিসেবে দাবি করার জন্য অবশ্যই নির্ভরযোগ্য দলিল প্রয়োজন। খাওয়ার শুরুতে লবণ মুখে দেওয়াকে অনেকে সুন্নত মনে করেন, কিন্তু এই বিষয়টি শরিয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু সঠিক, তা জানা জরুরি।
খাওয়ার শুরুতে লবণ মুখে দেওয়াকে সুন্নত বলা যায় না। কারণ এ বিষয়ে নবীজি (স.)-এর কোনো নির্ভরযোগ্য হাদিস বা নির্দেশনা পাওয়া যায় না। প্রচলিত কিছু বর্ণনায় খাওয়ার আগে ও পরে লবণ খাওয়ার ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে; যেমন- এটি তিনশত ষাট প্রকার রোগ থেকে রক্ষা করে, যার মধ্যে কুষ্ঠ ও ধবল রোগও অন্তর্ভুক্ত। তবে ইসলামি বিদ্বানগণ এই বর্ণনাগুলোকে জাল বা বানোয়াট হিসেবে সনাক্ত করেছেন। হাদিস বিশেষজ্ঞ ইমাম সুয়ুতি (রহ.) ও ইমাম ইরাকি (রহ.) উল্লেখ করেছেন যে, এই ধরনের বর্ণনা নবীজি (স.)-এর নামে জাল করা হয়েছে। (জাইলুল লাআলিল মানসুআহ: ১৪২)
এছাড়াও, এই বিষয়ে প্রচলিত অন্যান্য কথাও কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র দ্বারা প্রমাণিত নয়। তাই শরিয়তের দৃষ্টিতে খাওয়ার শুরুতে লবণ মুখে দেওয়াকে সুন্নত বলা বা এর ফজিলত সম্পর্কে কথা বলা বৈধ নয়। বরং নবীজি (স.)-এর নামে জাল হাদিস প্রচার করা গুরুতর অপরাধ। সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নামে এমন কথা বলবে, যা আমি বলিনি, সে তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করবে।’ (সহিহ বুখারি: ১/৫২)
আরও পড়ুন:
কোন সময় দোয়া করলে বেশি কবুল হয়?
চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে
চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে খাওয়ার আগে সরাসরি লবণ মুখে দেওয়ার কোনো স্বীকৃত স্বাস্থ্য উপকারিতা নেই। বরং অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৫ গ্রাম (এক চা চামচেরও কম) লবণ গ্রহণ করা উচিত। খাবারের আগে আলাদাভাবে লবণ খেলে এটি প্রস্তাবিত মাত্রা অতিক্রম করতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তাই চিকিৎসকরা সাধারণত খাবারের মধ্যে থাকা লবণকেই যথেষ্ট মনে করেন। তারা আলাদাভাবে লবণ গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করেন।
আরও পড়ুন:
ক্ষমা চেয়ে ইসলামের পথে পরিচালক
ইসলামে প্রতিটি ইবাদত ও আমল নির্ভরযোগ্য দলিলের ভিত্তিতে হওয়া আবশ্যক। খাওয়ার শুরুতে লবণ মুখে দেওয়াকে সুন্নত মনে করা বা এর ফজিলত সম্পর্কে জাল হাদিস প্রচার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। মুসলিম হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো শুধুমাত্র বিশুদ্ধ হাদিস ও সুন্নতের অনুসরণ করা এবং ভিত্তিহীন কথা থেকে দূরে থাকা।
আরও পড়ুন:
হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ল ২১ দিন